নব আলোকে বাংলা
উত্তরাধিকার। অঙ্গীকার। দূরদৃষ্টি।

সম্পাদক
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
পাঠক পরিষদঃ চঞ্চল চৌধুরী, শুভলগ্না শোয়ারা

প্রকাশকালঃ ২৮শে অক্টোবর ২০১৯

টরোন্টো, কানাডা

*

সম্পাদকীয় ছন্দাবলী - ২৯

জীবনের উৎসবের শুরুতে চেতনার জন্মের আগে
মনের উৎসবের শুরু হয়ে যায় নিজেরই অজান্তে
উৎসব সংখ্যার সম্পাদকীয় ছন্দাবলী লিখতে বসে
মহান মৃত্যুর উদ্দেশে জীবনের উৎসবের কথা আসে
চারিদিকে আজ আলোর মেলা চোখ মেলে দেখি তাই
প্রার্থনা দোয়া দিয়ে মনের ঘরে আলো জ্বালাতে চাই
আজ সেই সব মূক বাতিওয়ালাদের ঘরে আলো জ্বালাতে হবে
আর কতদিন আঁধারের বুক চিরে ওরা আলো জ্বালাবে এই ভবে
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এই বিশ্বাসেই যেন চলে এ’ধরা
মানুষের সাথে মানুষের মিলমিশে শান্তি প্রীতি যেন হয় শ্রগ্ধরা
ঋদ্ধ হোক সবার মন
সমৃদ্ধ হোক মানব জীবন…

আপনাদের
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ
২৮শে অক্টোবর, ২০১৯

*

 এবারের প্রকাশনার সূচীপত্র

কবিতা

*

দশমী

স্পর্শআঁচ

তোমার এত সুধা 

নিরোত্তর জীবন

চতুর্দশপদী কবিতা - সুখ

যন্ত্রণা

সোমাঙ্গনা

মোহরন্বেষা

*

পত্র সাহিত্য

অবাকপুরের চিঠি

*

গল্প

তাহার সঙ্গে কথা

*

জীবন দর্শন

*

জীবনের পান্ডুলিপি 

ঠিক ফেরার আগে

*

ধারাবাহিক উপন্যাস

একি খেলা আপন সনে

*

প্রবন্ধ

যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ

***

*

*

কবিতা

*

দশমী
সুপ্রতীক অরূপ

আদি চলে গেল অনন্তের ওপারে
রেখে গেল স্মৃতিমনকে মনান্তরে
প্রেমে মনে মননে দেহে প্রাণে আকিঞ্চনে
আনন্দে যন্ত্রণায় সুখে দুখে আলিঙ্গনে দহনে
সময়ের নিয়ম মানা অন্যায় বধিরতার দায়
মিথ্যা উষ্ণতায় মন সাগরও সুখায়ে যায়
সমুদ্রে বাসা যার তাকে দিলে ঝিল কিম্বা নদী
এইভাবে যদি রূপ বদলে মনকে বলত আদি
স্নায়ু তন্ত্রী দলা পাকিয়ে নিঃসাড় হয়ে আছে ব্যথা
মনে পড়ে যায় সুনিল দাসের দশমী নাটকের কথা
বিফল অভিনেতৃ পুরুষ হাসে বুকের রক্তক্ষরণ গাথা
মনকে অভিনয় করতে হয়না সে অসীমা অতুলনীয়া
ভাল থাকার অভ্যাস বহাল থাক জোড়াতালির দুর্দমনীয়া
আদি চলে গেল অনন্তের ওপারে
রেখে গেল স্মৃতিমনকে মনান্তরে

***

স্পর্শআঁচ
সৈয়দ আফসার


এই পৃথিবী থেকে একদিন মুছে যাবে—আমারও নাম
জীবনের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেল মিটেনি মনস্কাম
মনোঘরে বাসনাও জমে, তারা দেখে জেগে থাকি রাত
সারাক্ষণ তুমি ভ্রান্ত এক ধারণায় বাড়িয়ে রাখলে হাত
স্মৃতির হাড়ে আমিও পুষে রাখি কথা, জীবনের ব্যর্থতা
গাঢ়রঙে মোড়ানো ব্যর্থঅভিমান, যেন দুঃখের গভীরতা
তোমার দিকে গড়িয়ে পড়ছি যেন, কথা না-শোনা কানে
অবশ করা এই দেহমনে সদা একটা টান থাকে গোপনে

এই শীতে, হিমের একটুআধটু ঘ্রাণে, আমিও খুলে রাখি দেহের বোতাম।মুহূর্তে ছড়িয়ে দাও তুমি, কিছু স্পর্শআঁচ

***

নিরোত্তর জীবন
সৈয়দ তাহসিন আহমেদ

সেদিন কে যেন নিঃশব্দে ডেকে বলেছিল
জানেন? স্মৃতির অপর নাম জীবন,
অথবা জীবনের অপর নাম স্মৃতি ।

স্মিতহাস্যে বলে দিলাম, ক্ষমা করবেন,
আসলে জীবনের কোন মানে নেই!
সাড়ে আট সহস্রাব্দ দিবস পেরিয়ে
জীবন নামক তিন শব্দের উত্তরের খুঁজে
প্রাণান্ত চেষ্টায় বিঘতখানেক উত্তর পাই নি!

গ্রীষ্মঋতুর ভর-দুপুরের তীব্র দাবদাহে
পৌষের কনকনে হিমেল আদ্রতায়,
পূর্ণিমা রাতে কিংবা ঘোর অমাবস্যাতিথিতে
ফাগুন উৎসবে অথবা মায়াবতীর সীঁথিতে
কোথাও বিন্দুমাত্র জীবনের মানে নেই!

আয়ুরেখা, বিষুবরেখা, সমুদ্র তটরেখা ধরে
যখন বাস করতে থাকি সামাজিক সংসারে
কেউ বলতে আসে নি! জানেন? জীবন মানে কি?
প্রয়োজন নেই! আমি নিজেই খুঁজি বেড়াচ্ছি
জীবনের অর্থবহ প্রামাণ্য সংজ্ঞা ।

সেই উত্তরের খুঁজে যাযাবর বেশে
মানুষ রোমান্থন করে স্মৃতি
আমি রোমান্থন করি জীবন ।

অথচ! কে একজন বলেছিল,
স্মৃতির অপর নাম জীবন
অথবা জীবনের অপর নাম স্মৃতি ।।

***

তোমার এতো সুধা
প্রণব আচার্য্য

টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে দগ্ধ টায়ার দেখা ছাড়া কোন গন্তব্য নাই
তবু ধেয়ে আসে ট্রেন, নতুন নতুন স্টেশানে ডানা মেলে পাখি

হায়, এই দেশে তুমি এখনও পোশাক পর, শিস দাও
দুপুরের অন্ধকারে পিঠ দিয়ে রোদ পোহাও

তোমার এতো সুখ, এতো সুধা, এতো ঘ্রাণ
এতো ভালোবাসা, প্রেম ...
কে দিয়েছে?—বল সুবিমল

টায়ারের গন্ধে আর যে ঘুম আসে না।

***

চতুর্দশপদী কবিতা

সুখ
এ টি এম মোস্তফা কামাল


ভাবের সুতায় দেখি ধরা পড়ে কতো আকুলতা,
হৃদয় অতলে ঢাকা ভালো মন্দ যতো আর্তি আছে
বের হতে চায় শুধু কথা হয়ে তুমি এলে কাছে।
আমার জমানো কথা, আসো যদি, শোনাবো সুলতা।
একা একা বলে বলে শিখে রাখি সেই সব কথা;
বিমুগ্ধ মোড়কে ঢাকা কথামালা ভুলে যাই পাছে।
সুখের নরোম ঘুমে ডুবে যাবো, ভেতরে যা আছে
সব যদি বলা যায় একে একে তোমাকে সুলতা।

হঠাৎ জোছনা রাতে তুমি এসে আমার সমুখে
নীরবে দাঁড়ালে আর চোখ তুলে চোখেই তাকালে।
পলকে অনেক কথা বলা হলো, কথা নেই মুখে !
নীরব ভাষায় হলো কথকতা কথার আকালে !
সব কথা বলা হলো ভেবে মন বাজে রিনি ঝিনি!
তুমি গেলে মনে হলো, কী অবাক, কিছুই বলিনি !

***

যন্ত্রণা

সুপ্রতীক অরূপ

 কবিতাকে ভালবেসে তোমাকে পাওয়া
মনপুর কত দূর জানিনা তবু যাওয়া
ভৌগলিক দূরত্ব ইতিহাস কিম্বা ভবিতব্য
জানিনা, জানতেও চাইনা
দীপ্তা সানন্দা স্বছন্দা গরবিনী না অহঙ্কারী
একদিন যেওনা হারিয়ে, হোক না একটু বাড়াবাড়ি
পেরিয়ে হাট বাট
ছুটিয়ে মাঠ ঘাট
দিগন্তের ওপারে দাঁড়িয়ে
দেখো সে দু'হাত বাড়িয়ে
নির্বাক সে বর্ণহীন শব্দবিহীন
শুনতে তুমি পাবেই
দেখা হবে আত্মাপুরে
না পেলে থাকুক শরিরী যতিচিহ্ন
মনপুর যবে আবার হবে অশান্ত
সেই ভোরে কিম্বা রাতে কিছু অবান্তর
শব্দপুঞ্জ এসে ছুঁয়ে যাবে তোমায়
তোমার হয়ত এক শতাব্দী লাগবে
উত্তর দিতে তবুও শীত গ্রীস্ম আসবে
বর্ষা তো এসেই আছে
চোখের কোলের খুব কাছে...

***

সোমাঙ্গনা

সুপ্রতীক অরূপ

উপোসী মন শিব সাধিকা হয়ে থাকার
অভ্যাস সেই ছোট্ট মেয়েবেলা থেকে
কেন, কেউ জানতে চায়নি সময়ের ফাঁকে
দীঘল ভরাট চোখদুটি নীরবে আশ্রয় দেয় সবাইকে
সব দুঃখ শোক যন্ত্রণাকে আপন করে নেয়
সেই দু'চোখের পরতে পরতে কি আছে সেও জানে কি
ঊদাসীনতার সুখ ঘিরে থাকে সারাক্ষণ পুত্র স্বামী সংসার
এই নিয়েই সে ভাল আছে, সে মনে করে, সারাটা জীবন অসাড়
এমনই জীবন মনে হয় তাই সে আড্ডা আর গল্প করে দিন কাটায়
কেউ যেন টান মারে শিকড় ধরে হঠাত, যে ছিলনা উঠোন বাতায়
বুকের ভেতর জমে আছে অনুভূতির হিম পাহাড় যার খবর কেউ জানেনা
তোমাকে একটু হলেও চিনেছি হয়ত ওগো আপন মনপুরের সোমাঙ্গনা...

***


মোহরঅন্বেষা

সুপ্রতীক অরূপ

প্রেমপত্র লেখেনি সে কয়েক শতাব্দী
বৌ পালিয়েছে তাই কাঁদে হিরু বাগদি
হুকিং এর তার টেনে আলো জ্বালায় হিরু
চোর নয় তবে চুরি করে বাঁচে প্রেমিক ভীরু
সেই হিরু বাগদির সাধ হল মুখগ্রন্থ নদীর বানে
উজান বেয়ে মিলবে এবার মোহরঅন্বেষা সনে
মানুষের আজও পড়তে, বুঝতে ভাল লাগে ধরে নিয়ে
সামনে এল সে ছড়রা কবিতা ও ক্ষীর ঢালা কলম বেয়ে
মোহর নামটি হিরু বাগদির মনে
জমা আছে হৃদয়ের শান্তিনিকেতনে
অন্বেষার আঁখীকোণে এত আলো
টানল তাহার মনকে, লাগল ভাল
কথা হলনা
বলা হলনা
জানা হলনা
উপেক্ষা
অবজ্ঞা
নাকি আজ্ঞা
অবশেষে
কবিতায় মোহরকে গোলাপী শীফনে ঢেকে
তার লজ্জাবনতা অহঙ্কার অনাবৃতা দেখে
দ্রুত শ্বাস চলে হিরুর আলোকবর্ষ পর
বর্ষায় কি করে হল এমন বসন্ত দুর্মর
আলোকবর্ণিকা মোহরকৃষ্ণা জানে
কদম্ববনে জ্যোতস্নাভেজা মন টানে
হিরু বাগদির প্যাপিরাসে কাব্যকণিকা
বন্যা মোহর তোমার জন্য লেখা তাতক্ষণিকা...
অলস নির্মনন অস্তিত্বে রইল পড়ে
আবিশ্ব প্রাণ নৃত্যের এই আসরে
ভালবাসা আর খোঁজেনা সে কায়ায়
আত্মাপুরের ক্যাসুরিণার মোহরায়
ভালবাসার আশ্রয়ে ও ছায়ায়
আশায় বাঁচে চাষা
আশার আরেক নাম ভালবাসা...
জানে কি হিরু বাগদির মোহরঅন্বেষা!

***

পত্র সাহিত্য - অবাকপুরের চিঠি

সকাল রয়

সুচতিরাসু কঙ্কাবতী,

পত্র যখন লিখিতে বসিয়াছি তখন তুমি নিদ্রাদেবীর কোলে ঝুমিতেছো। আর এদিকটায় বিপন্ন বৈরী হাওয়ার জলভরা রাত্তিরে আমি ভিজে চুপ-চুপে চুলমাথা লইয়া তোমাকে লিখিতে বসিয়াছি। ‘নিদ্রা’ তোমার বরাবরই প্রিয়। মধ্য-রাত্তিরে মেঘ বরিষণে অতি অল্পবিস্তর মনুষ্য জাগিয়া থাকে। তাহার উপর আজি দিবসের দ্বিপ্রহরে তুমি নিজগৃহ হইতে এতখানি পথ ভ্রমণ করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছ। নিয়মতান্ত্রিক জীবনে দীর্ঘরাত্রি জাগরণের অভ্যেস তো তোমার নাই তথাপি এই মধ্য-রাত্তিরে নিদ্রা যাইবার সম্ভাবনাই প্রবল।
আমি নিজেও সচরাচর মধ্য-রাত্তিরে গৃহে আসি না। আজ “অনুরোধ অলংকরণ” কার্ডের কর্ম করিতে করিতে কখন যে রাত্রি দ্বিপ্রহর হইয়া গিয়াছে তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। স্টুডিও হইতে বাহির হইবার তোড়জোড় করিবার আগ-মুহূর্তে হঠাৎ বৃষ্টিবর্ষণ শুরু হইয়া গেলো। ভাবিয়া দেখলুম জ্যৈষ্ঠের বৃষ্টি ক্ষণকালের জন্যই, এই বুঝি থামিয়া যায়!
কিন্তু প্রায় একশত কুড়ি মিনিট অতিক্রম করিবার পরও যখন থামিবার কোন রেশমাত্র চোখে পড়িলো না। তখন নিতান্তই “অবাকপুরের যাত্রী” হইয়া বসিয়া রহিলাম। বসিবার এই অকস্মাৎ আয়োজনে হঠাৎ মনে পড়িল তোমার কথা। ভাবিলাম দিবসে তো সময় মেলে না এক্ষণে কিঞ্চিৎ কথা বলিয়া লই। পকেট হইতে সেলফোনখানা বাহির করিয়া তোমার সেল নম্বরের উদ্দেশে সঞ্চিত নম্বরে ডায়াল করিলাম। তুমি ঘুমাঙ্ক নিরুত্তাপ কন্ঠে আমার আহবানে সাড়া দিলে। তাহার পর কি হইয়াছে তাহা তো তুমি জানোই। তবে যা জানো না আজ তাহা লিখিব বলিয়াই পত্র লিখিতে বসিয়াছি।
সেইক্ষণে বৃষ্টির তান্ডবে আমি তো বসিয়াই ছিলাম। রাত যখন বারোটার কাঁটা অতিক্রম করিয়া প্রায় এক ঘটিকা’র মতো বাজিয়া যাইতেছে তখনও বর্ষণ চলিতেছে। অগত্যা বৃষ্টির সহিত বোঝাপড়া করা বাদ রাখিয়াই পথে নামিলাম।
প্রায় সাত বৎসর পর এইরূপে বৃষ্টিতে ভিজিতে ভিজিতে চলিলাম। স্টুডিও হইতে নিজ গৃহে ফিরিবার পথ সে-তো অনেকখানি। সমস্ত পথ একেবারে বৃক্ষের ন্যায় ভিজিয়া গৃহে প্রবেশ করিলাম। জননী উদ্বিগ্ন হইয়া বারান্দায় দাঁড়াইয়া আমার গৃহপ্রবেশ লক্ষ্য করিলেন।
তাহার পর আরও কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজিলাম। পুরোনো মন্দিরের ধারে খোলামাঠে একাকী নির্জনতায় ছুটোছুটি করিলাম। সেই কৈশোরের দিনগুলোর মতো নিজেকে খুব হালকা ঘুড়ির মতোন মনে হইলো। সেই বৃষ্টির তান্ডব প্রান্তরে দাঁড়াইয়া দু’চক্ষু বন্ধ করিতেই পুনরায় তোমার কথা মনে পড়িয়া গেলো...
তোমাদের ‘অট্টালিকা’ সে ভারি মনোহর! সেখানেই লতিকার ন্যায় তোমার বাড়ন্ত দিবসের শুরু। সে ক্ষেত্রটা ভাবিলে আমার এই কুঁড়েতে তোমায় ঠিক মানায় না। এই দূর্বাপাথর মাঠ, এই রুক্ষতা তোমার কোমলতার কাছে বড়ই বেমানান। পকেটে কড়ি না থাকিলে আর যাই হোক জীবনটা পরম ভাবে উপভোগ করা হইয়া উঠে না।
যে ‘দৈন্যের প্রজাপতি’ কোনদিন তোমাকে স্পর্শ করিতে পারে নাই, সে দৈন্যের সাগরে তুমি সাঁতার কাটিতে পারিবে না। “আবেগ এক আশ্চর্য ফুল, সে কখনো আপনার জন্য উদয় হয় না কিন্তু অপরকে ঠিক লোভাতুর করিয়া তোলে”। আবেগের অরণ্যে সুখের পাতাভরা বৃক্ষ থাকিলেও সেখানে মধুময় হাওয়া নাই।
সেই সব সিনেমার মতো মুখে তুমি যতই বলিয়া বেড়াও বৃক্ষের নিচে সংসার সাজাইয়া জীবন দিনাতিপাত করিয়া লইবে, বাস্তবের যাঁতাকলে তাহা কোনভাবেই সম্ভব নহে। তোমার ওই কোমল হাতে পাথর চালাইবার খঞ্জর তুলিয়া দিলেই কি তুমি তাহা চালাইতে পারিবে? জানি এ তোমার অসাধ্য!
এভাবেই ভাবনাগুলো বিশাল দিগন্ত পার করিয়া যাইতেছিল। বেশ কিছুকাল পর বৃষ্টির ধার থিতু হইয়া উঠিলো বলিয়া আমিও ভাবনা হইতে প্রত্যাবর্তন করিলাম। নিজ কক্ষে যখন ফিরিলাম, তখন তুমি নিদ্রাদেবী’র কোলে দুলিতেছ অনেক কিছু বলিবার ইচ্ছে থাকিলেও সেলফোনের সুরেলা সুরে তোমাকে আর ডাকিলাম না।
কঙ্কাবতী, 'ঘুমনগর’ বা জাগ্রত প্রহরে ভালো থাকিও। এরপর আর কখন যে তোমাকে পত্র লিখিব সে কথা এই মুহূর্তে ভাবিতে পারিতেছি না।

বিনীত - সকাল

***

গল্প

*

তাহার সঙ্গে কথা

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

 

বিছানায় শয্যাগত মানুষটার চোখে যাতে আলো না লাগে এমনভাবেই টেবিলল্যাম্পটা কাগজের ওপর ফোকাস করে একটা কাব্য নাটকের শেষাংশ লিখে চলেছে মল্লিকা। মানুষটা অর্থাৎ মল্লিকার স্বামী বিজনের কিন্তু তাতেও যথেষ্ট অসুবিধে হচ্ছে। সাদা কাগজে টেবিলল্যাম্পের আলো প্রতিফলিত হয়ে দেওয়ালে ছড়িয়ে পড়ছে। তীব্র নয়, ছায়া ছায়া আলোর আভা দেওয়াল থেকে প্রতিফলিত হয়ে বিজনের চোখে এসে লাগছে। লাগাটা সামান্য হলেও বিজনের চেতনায় সেটা অসামান্য বিরক্তিকর হয়ে ওঠায় সে রীতিমতো উশখুশ করছে। ইতিমধ্যে বার কয়েক বিরক্তিসূচক শব্দও গলা দিয়ে বের করেছে এবং গোটা কয়েক সিগারেট ধরিয়ে কয়েকবার টেনে অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিয়েছে। তবুও মল্লিকার মনযোগ বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ হয়নি। মল্লিকার এই অখন্ড মনযোগ বিজনকে ক্রমশই উত্তেজিত করে তুলছিল। তার এই মনযোগ ছিঁড়ে খুঁড়ে তছনছ করার জন্যে আজো বিজন...

(বাকীটুকু এখানে...)

*

জীবনদর্শন

জীবনের পান্ডুলিপি

হুমায়ূন বাদশাহ্

মানুষের জীবন হলো এক একটা অপরিচিত ও অপ্রকাশিত বইয়ের পান্ডুলিপি। চারিপাশের শত পরিবর্তনের মাঝেও মানুষের জীবন কিছু মূল্যবান সময় ধরে রাখে তার চলমান বলয়বৃত্তে। এক একটা জীবন নানাবিধ পরিবর্তন ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় আর গ্রথিত হয় এক একটি পান্ডুলিপি। সেই পান্ডুলিপিতে থাকে জীবনের নানা অধ্যায়। একটা জীবনের যত সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, শোক-উল্লাস, মান-অভিমান, প্রেম-ভালবাসা, বিরহ-বেদনা, ঘর-সংসার সবকিছুই রয়ে যায় সেই পান্ডুলিপির নানা অধ্যায় জুড়ে। কিছু কিছু বিষয় অভাবনীয় ও অদ্ভূত। ঘটনা ও বৈচিত্র্যে এক একটি অধ্যায় নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে অনন্য। পাঁচমিশালী সব অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার ব্যঞ্জনা নিয়ে গড়ে ওঠে এক একটি মানুষের জীবন। এক একটি স্বতন্ত্র, অনন্য ও অনুপম সব পান্ডুলিপি রচিত হয়। এই পান্ডুলিপির প্রতিটি পৃষ্ঠা অজানা সব ঘটনার মিশেল।

জীবন পান্ডুলিপির কোন কোন পৃষ্ঠায় কিংবা কোন কোন অধ্যায়ে লেখা থাকে আলসেমি বা জীবনবিমুখতার কথা। কিন্তু সেটাই শেষ অধ্যায় নয়। একটু ধৈর্য্য ধরে আরও কয়েক পৃষ্ঠা উল্টালেই দেখা যাবে সেখানে জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা আছে নানা পরিশ্রমের কথা। কেউ যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিশ্রমের পাতায় কিছুক্ষণ চোখ বুলায় তবে দেখা যাবে সে আলসেমির অধ্যায়ের কথা প্রায় ভুলেই গ্যাছে। এবার মন চাইতে পারে পান্ডুলিপির পরের পাতাটা না হয় একটু উল্টিয়েই দেখি। পরের পাতায় হয়তো লেখা আছে অধ্যাবসায় ও সাধনার কথা। ততক্ষণে সে মনোযোগী হয়ে ওঠে পান্ডুলিপি পঠনে, পাঠোলব্ধিতে। তাকে নানা বিষয় আকৃষ্ট করে। ইতিমধ্যে সে হয়তো জীবন পান্ডুলিপি পাঠ করার অন্যরকম এক অভ্যাস রপ্ত করে ফেলে। অধ্যাবসায়ী ছাত্ররা তাদের পাঠাভ্যাস নিরন্তর অক্ষুন্ন রাখে। তাই পান্ডুলিপির শেষ অধ্যায়ে রচিত হয় সাধনার কথা।

সাধনা একান্তই নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির উপন নির্ভশীল। কেউ যদি সেটা ভালভাবে রপ্ত করতে পারে তবে জীবন পান্ডুলিপি রচনায় সে হতে পারে একজন সার্থক রূপকার। সাধনালব্ধ আদর্শ যদি পরিশিষ্টে সে সুন্দর ও সার্থকভাবে তুলে ধরতে পারে এবং তা যদি অন্যদের অনুপ্রাণিত করে তবে সেটাই হবে তার জীবন পান্ডুলিপির সেরা অধ্যায়। তার জীবন তখন আর শুধু পান্ডুলিপিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। মানুষের কাছে তা একটা সার্থক ও পরিপূর্ণ জীবনগ্রন্থ হয়েই প্রকাশ পাবে। তার প্রকাশিতব্য জীবনগ্রন্থের প্রতিটি পান্ডুলিপি বা অধ্যায় হয়ে উঠবে এক একটা সামাজিক দলিল। এভাবেই একটা অপরিচিত মানুষ অনেক মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। মানুষই মানুষের পথ প্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে। অথচ সব মানুষের মাঝে সেই নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা থাকেনা, যায় থাকে সে’ই হয় শ্রেষ্ঠ পান্ডুলিপি রচয়িতা। শ্রেষ্ঠ মানবদের একজন।

***

ঠিক ফেরার আগে
সুপ্রতীক অরূপ ঘোষ

কবিঃ আর সাতটা দিন পরে তেষট্টি হয়ে যাব

মনবন্ধুঃ দারুন ব্যাপার বন্ধু, একবার শুধু ভাব

কবিঃ আরে, এ আর নতুন কি, যে ভাবব

মনবন্ধুঃ বৈদীক মতে তুমি নয়ে পৌঁছবে

কবিঃ এর মানে কি, যা নিয়ে ভাবতে হবে

মনবন্ধুঃ ছয় আর তিন নয়

কবিঃ সেতো এমনিই হয়

মনবন্ধুঃ নয় থেকেই তো শুরু দশের পথ

কবিঃ হেঁয়ালির সময় নেই, ধর সহজ মনপথ

মনবন্ধুঃ আরে বাবা তেষট্টির ইয়াসের আরাফত সুহার হাতে হাত রেখেছিল

কবিঃ তো আমি কি করব, পবনপুত্র, তারা কি কিছু নতুন পথ বাতলেছিল

মনবন্ধুঃ তোমার ইঙ্গিত কিন্তু বাপু ভাল ঠেকছেনা

কবিঃ আমিও তোমার কথা বুঝতে পারছিনা

মনবন্ধুঃ তোমার হল কি

কবিঃ আমাকে যেতে দেবে কি

মনবন্ধুঃ কোথায় যাবে তুমি

কবিঃ যাব আমার উতস ভূমি

মনবন্ধুঃ একটু বুঝিয়ে বল

কবিঃ তাহলে সঙ্গে চল

মনবন্ধুঃ কোথায়!

কবিঃ বিদেশে এসেছিলাম বেড়াতে অজান্তে, অচেতনে

মনবন্ধুঃ কি বলছ তুমি, আছ কি সচেতনে!

কবিঃ বন্ধু এবার ফিরব স্বদেশে, স্বগৃহে, উতসের কাছে

মনবন্ধুঃ কি হচ্ছেটা কি শুনি, কোথায় যাবে কার কাছে

কবিঃ ঠিক যার কাছ থেকে এসেছিলাম, যেখান থেকে

মনবন্ধুঃ যেতে চাও যাও চলে যাও মেদুর স্মৃতি অবজ্ঞায় ঢেকে

কবিঃ আরে, আসা আছে যাওয়া নেই তাই কি হয় 

মনবন্ধুঃ আমি বুঝি, তেষট্টি বছর ঘর ছেড়ে আছ তুমি সেও কম নয়

কবিঃ এই না হলে আমার বন্ধু তুমি মন, তুমি জান আমার সময় শেষ

মনবন্ধুঃ জীবনে, নাটকে, গানে, কবিতায় ও ত্রিনয়নে তুমি আছ জানি

কবিঃ এই বার কলম বিচ্ছিন্ন হল সমজীতা কাগজের থেকে,যবনিকা টানি...

নিঃশব্দ পতন হয় অসাড় শরীরের তবু থেকে যায় তেষট্টি বছরের অগুন্তি কম্পন

মনবন্ধু নীরবে কাঁদে বা হাসে অমোঘ সত্য মেনে নিয়ে দূরে কোথাও হাসে মেঘের কঙ্কন...

বলে গেলাম ঠিক ফেরার আগে, স্বল্প হলেও, অমূল্য সময় কাটালাম তোমাসাথে...

সমজিতা কঙ্কন সহস্র বছর পরেও পাবে অভিনেতা কবির হাত তোমার হাতে...

***

ধারাবাহিক উপন্যাস

একি খেলা আপন সনে

*

প্রবন্ধ

যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ

*

আর্কাইভ