বাংলাদেশ, আমি তোমার


বাংলাদেশ, আমি তোমার আলুথালু শরীরের মানচিত্রের দিকে গিয়েছি কতবার
তোমার শরীরের অজস্র ক্ষত আমি পা দিয়ে মাড়িয়ে সামনে চেয়েছি যেতে
তোমার উদ্দাম কেশরাজি আর ওড়ে না কালবৈশাখীর প্রমত্ত ঝাপটায়
বাঁশবনে ঝাঁকে ঝাঁকে পিচাশের দল মেতে ওঠে নগ্ননৃত্যে
শ্মশাণচারী কুহকের আনাগোনা গিয়েছে বেড়ে তোমার সাবলিল ওষ্ঠে
তোমার রৌদ্রের মতো যুগল অমৃতে ভালোবেসে ভ্রোমর বসেনা কতদিন
তুমি জানতেও পার নি তোমার জ্যোৎস্না কবেই হয়ে গ্যাছে মলিন
নিবে গ্যাছে তোমার ঝোঁপে ঝোঁপে সব জোনাক পোকার ঝলোমল
তোমার উদাস বাউল, তার গলায় সভ্যতার নিদারুণ কুষ্ঠ দিয়েছে হানা
বাংলাদেশ, আমি তোমার ভুলে যাওয়া সঙ্গীত; তোমার জঠর থেকে
তোমাকে নিয়েছে ছিনিয়ে যে জারজ যুবরাজ, তার মুখে থুথু দিয়ে
আমি উৎপাদন করেছি সঙ্গীত; তোমার ধান ক্ষেতে, পাট ক্ষেতে,
সুপোরির বাগানে, শালবনে, হেলেঞ্চায় অথবা উঠোনের একরত্তি সৌখিন
বাগানে তবু দ্যাখো আজ কীটের হানা; আমিও গিয়েছি ভুলে সমস্ত সুর

বাংলাদেশ, আমি তোমার বেদনার মানচিত্রে ক্রমশ গিয়েছি তলিয়ে

২৮.০৩.০৮

 

 

 

দ্বীপান্তরে

আমারও মতের অমিল হলে দ্বীপান্তরে বসতি রেখে
ভাঙ্গা গলুইয়ের কাছে বন্ধকী রাখি পারাপার; অগ্নিভ সন্ধ্যায়
প্রান্ত-দ্বীপে আকাশ থেকে নেমে আসে যে আঁধার রঙের
উষ্ণতা, তাকে আমি অবহেলায় উপেক্ষা করে লিলিয়ান,
তোমারই মতো, তোমার ঘ্রানের মতো, তোমার লিপষ্টিকের
গৌরব-ম্লান করা নারীর নিকট সংস্থাপন করি আমার সময় প্রবাহ।

পৃথিবীর দিকে ফিরে আসা তোমার কখনোই হবে না;
ওড়ানর রঙ ফিকে হয়ে কালচে হ'লো; ঠিক তোমার মতো
তোমার নতজানু আঙ্গিকের মতোন। লিলিয়ান, তাই আমার
মতে অমিলের বিপরীতে সেই সস্তা রঙা মানবীর প্রতিষ্ঠা
আমার উদ্দেশ্যে যার প্রশ্নের বিরামহীন নিঃশঙ্ক আহ্বান;

আমার অপরাধী দৃষ্টি দ্বীপ-ভাঙ্গা অদৃষ্টের ঠাট্টায় মশগুল এখন।

১৬.০৮.০৮

উচ্ছিষ্ট

সাদা আকাশের নিচে আমি দাঁড়িয়ে সবুজকে নিবিড়ে
টানি। জানি, আমাকে দেখে ঘৃনায় চোখ ফেরায় ঘাঁস ফড়িং-
ইষ্টকুটুম-চড়ুই আর শালিখের দল। কী এক কারনে শুধু
নিজেকে বন বেড়াল বলে মনে হয়; কতটা যৌক্তিক অথবা
অযৌক্তিক -জানি না- জানি উচ্ছিষ্ট। বিস্মৃতির ধূসরে
যদি হারাই তবু দুর্নাম কিছু কম হবে, এই যা ভরসা।
সাদা আকাশ ক্রমশঃ হচ্ছে ছাই বর্ণ। এই প্রান্তর হবে
সবুজ- দু'একটা ব্যাঙ বেরুবে শিকারে, কলতানে
মুখরিত হবে মাকড় সম্রাজ্য- কতটা অসহায় হয়ে,
কতটা আশা নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছি। ভালোবাসতে
চাই সবুজকে। বাতাসে মুছে যায় আকাশের ছাই রঙ

এতটা উচ্ছিষ্ট নিজেকে আর হয় নি কখনো মনে।

২৮.০৯.০৮

সবুজ অর্কেষ্ট্রা

 

.
পৃথিবীর দুরহতম আকাঙ্খার কাছে এইভাবে নিমজ্জিত হয়ে থাকে
আদিম কল্পণার অনুপ্রাস; হে সময়, হে অনুচ্চারিত প্রেম,
কোথায় গিয়েছে চলে আমাদের জানু আর জঙ্ঘার বিবিধ উচ্চারণ?
তরল জ্যোৎস্নার মতো বিষাদের কাছে (নিয়তির কাছে?)
ক্লান্ত মানুষের বোধের পরাজয় ঘটে। রাত আর অন্ধকার
এরকম ভাবে টিকে থাকে মস্তিস্কের কোষে কোষে;


.
ভুল বিন্যাসে লিখিত পংক্তিমালার সঙগে সহবাসের আকাঙ্খা
জাগিয়ে রাখেন নব্য কবি; বিস্তার করে চলেন শিল্পকলাহীন কবিতার স্তুপ
তিরিশি পঞ্চক আবার আসবেন কি আমাদের এই হিনমন্য
কবিতার উপত্যকায়? বুদ্ধদেব কি সুধীন্দ্রনাথ- উঠপাখি, জল দাও আমার শিকড়ে...
মাঝে মাঝে জীবনানন্দের কাছে কিছু ঋণ জমে আধুনিক
ছন্দের মাঝির বৈঠায়; আর সুধীন্দ্রনাথ? আজও চলছে পৃথিবী জুড়ে
নির্বোধেরই ভ্রান্ত দুঃস্বপ্ন;


.
ঈষানে ঈর্ষার বিষাণ আমাকে নিয়ে গ্যাছে অনেক দূরে; দূরতম শব্দের কাছে, পঙক্তির একেবারে শেষ সীমান্তে; অনিচ্ছার মেঘ যেখানে সমস্ত সকাল ভেসে চলে শুণ্যতার আবরণে; লহমায় ওড়ে বিষাদের তুলো যত্রতত্র; আমাকে নিয়ে যাবে তুমি? তুমি চরাচর আমার করেছ আলোকময়; তোমার যৌবনের কাছে বাধিত আমার প্রেম; বহুগামীতার ছদ্মবেশ আমার পুরুষময়। নদী থেকে ছুটেছি নদীর জলে অবগাহনে, সন্তরণে... তুমি, তোমার ঈষানে ওড়ে ঈর্ষার নিশান; তোমার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় ছুড়েছে হাতছানি?


.
মনে পড়ে, সবুজ অর্কেষ্ট্রার বাতাবরণে চিরকালীন কবিতার দুঃখকে ঢেকে রাখার সেই সময়? ছদ্মবেশী অনুরাগের কাছে জীবনের গূঢ়তর অধ্যায়ের পঠন লিখন; কারাগারের জমাট বাতাসের মতোন ঘিরে আস তুমি; আধুনালুপ্ত সময়ের তুমি কি শীতল স্পর্শ?
তুমি কি প্রেম? কাম? সহবাস? দেবী? অনাঘ্রাতা? কবিতা? বেশ্যা? দয়মন্তী?

 

১৭.০৩.০৮

 

 

জেগে ওঠে; তুমি পৈশাচিক উল্লাসে

 

হাতের তালুতে তুমি পৃথিবী আঁকা শিখে যাও-;

নিজের ভেতরে নিজস্ব নিয়ম বেড়ে ওঠা দেখে
সিগারেটের ধোঁয়ায় ভীষণ অহংকারী হয়ে যাই;
সেই ধোঁয়ার মধ্যে ভরে করে নাটকের
শেষ অংকের দিকে তুমুল ব্যাস্ততা নিয়ে
ধোঁয়াটে অনুপ্রবেশ ঘটে-;

আমার কব্জিতে বিদ্যুৎ খেলে যায়
তুমি নায়িকার সাজে মঞ্চ কাঁপাচ্ছো-;
ঘোর লাগা সংলাপ আর শরীরের চাতুর্যময়
সঞ্চালনে দর্শর সারি বিভিন্ন উল্লাসে মাতিয়ে রাখ
আমি আমি গৌন ভূমিকা নিয়ে কম্পমান মঞ্চে
গোপন আক্রোশ নিয়ে আরও ম্লান হতে থাকি

মঞ্চ জুড়ে কালো পর্দার ক্ষমা নামে:


সাজঘরে এসে এবার তোমার ম্লান হবার পালা
আমি আস্বস্ত হই, এবং ধোঁয়া ভেদ করে
ক্রমশ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠি; আমার পৌরুষ
স্বাতন্ত্রিক সত্ত্বায় জেগে ওঠে; তুমি সেই পৈচাশিক
উল্লাসে ভীষণ মানবিক হয়ে হাতের তালুতে দেখ-
মানুষ তার সঙ্ঘবদ্ধ আচরন থেকে সরে এসে
স্বাতন্ত্রিক পৃথিবী গড়ে তোলে;

০৪.০৯.০৮