কবিতার হৃদস্পন্দন

 

 

কবিতা অর্থহীন সংলাপ মাত্র, আলো আঁধারির নিছক চাতুর্যতা: এই বলে চলে গেলেন বয়সে ভারে ন্যুজ্ব প্রায় এক প্রাজ্ঞ কন্ঠস্বর।

থেকে গেল শুধু কবি
অনর্থক পংক্তিমালার
আলো আঁধারির ছায়ায়;

 


২৩.০৬.০৮

 

 

 

 

 

 

সবুজ অর্কেষ্ট্র-

 

সবুজ অর্কেষ্ট্রা, আছে কি আর কোন সুর?

সময়ের মারপ্যাঁচে নাকি সময়ের কাছে
নীবর হয়ে আসে সব যূথচারী;
বিপুল বিষাদগ্রস্থ্য সভ্যতার স্তব্ধতায়
কান পাতা দায়- কি তীব্র এই নৈঃশব্দ!
ঝাঁক ঝাঁক মৌমাছি মধুহীন সংসার
খেলে রতি; কত শতাব্দি ধরে
আমাকে তুমি চেনো কবিতা?
তোমার পবিত্র অশ্লীল খিস্তিখেউর জীবনাচারে
আছে কি আর কোন স্থান, রাখবো জমা
সবুজ অর্কেষ্ট্রার এই বিপন্ন গান;

২১.০৪.০৮

 

 

 

শিরোনামের প্রয়োজন নেই, শুধু তুমি ঈশ্বরী

 

এই কবিতার গন্তব্য কেবল তোমার দিকে
নির্ধারিত করে দিয়েছি-
তোমার দিকে- তোমার নির্মানের দিকে
শুধু তোমার উদ্দেশ্যে রচিত এই কবিতার
সকল পংক্তিমালা-
শুধু তোমার জন্যে।

এই কবিতার প্রত্যেকটি শব্দ তোমার প্রতিনামে
উচ্চারিত হবে- প্রতিটি বর্ণে বর্ণে কেবল
তোমার আয়ত দৃষ্টির বর্ণচ্ছটার রঙধনু দেখা যাবে-
পংক্তি থেকে পংক্তির দূরত্বে, ঈশ্বরের মতো-
ঈশ্বরীর মতো-
দুই পংক্তির মধ্যবর্তী নৈঃশব্দ্যে
তোমার চুপচাপ প্রহরগুলো উপমায়িত হবে-
কেবল তোমাকে লক্ষ্য করে এই কবিতার প্রতিটি চরণ-

তোমার হাসি-মুখ ঠোঁটের প্রান্তদেশে
যেরকম আমার কাতর চুম্বন ছুটে যায়-
তোমার গন্ডদেশে- বক্ষের উর্ধ্বভাগে
নাভী নিম্নে যেরকম আমার চুম্বন ছুঁটে যায়-
অথবা তোমার নক্ষত্রদ্বয়ে-
অথবা তোমার সমুদ্রে
আমার যে সন্তরনশীলতা-
এ নিছক যৌনতা নয়;
তোমার শরীরের সামনে-
তোমার ঈশ্বরী প্রতিমার সামনে
আমার দশটি আঙুল কেবলি কবিতা;
আমার চোখ মহাকাব্যের মতো মহত্ব নির্মানে
ঈশ্বরী, কেবল তোমাকে লক্ষ্য করে-

তোমাকে আবিষ্কারের নেশায়
তোমার আর্দ্র উষ্ণ নিঃশ্বাসের ঝড়োতায়
আমি সেই অভিযাত্রী;- তোমার কবি;

তোমার উদ্দেশ্যে আমার সকল চুম্বন কবিতা;
তোমার উদ্দেশ্যে আমার সকল আলিঙ্গন কবিতা;
তোমার উদ্দেশ্যে আমার সকল আলাপ কবিতা;
তোমার উদ্দেশ্যে আমার সকল যৌনতা কবিতা;

তোমার ওষ্ঠে বাহুতে উরুতে কামোন্মাদনায় নয়
কবিতা, কেবল কবিতার পংক্তি অর্ঘের মতো
রেখে আসি হে ঈশ্বরী;- তোমার স্নিগ্ধ ইচ্ছার সামনে-

তোমার দিকে- তোমাকে লক্ষ্য করে
এইসব কম্পমান অক্ষরগুলো
আর্তের মতো হাহাকার করে
সৃষ্টির অনিন্দ্য উল্লাসে;
এ নিছক পংক্তি নির্মান নয়-
তোমার নির্মান প্রয়োজনে, ঈশ্বরী

তুমি, তোমাকে লক্ষ্য করে এই রাতজাগা কবিতা;
দীর্ঘদিন আমি রাত জেগে কবিতা লিখি না
অথবা অনেকদিন কবিতার জন্য রাত জাগিনা;

তোমাকে উদ্দেশ্য করে অনভ্যস্ত এই রাতজাগা কবিতা
তোমাকে আবিষ্কারের আনন্দের মতো
তোমার মানচিত্রের সকল ভূ-রেখা পরিভ্রমনের মতো
এ কবিতা লেখা;

.................এ গোলার্ধ থেকে ঐ গোলার্ধের দিকে নয়
.................সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের দিকে নয়
.................গন্তব্য থেকে উৎসের দিকে নয়

তোমার নক্ষত্রদ্বয়ের জলবিন্দুর উদ্ভাসনের দিকে
তোমার মসৃন নাভীদেশের অতলান্ততার দিকে
তোমার চুড়ান্ত গন্তব্যের দিকে
এই কবিতা কেবল তোমার নির্মান প্রয়াসে, ঈশ্বরী
তোমাকে লক্ষ্য করে-
তোমার উদ্দেশ্যে রচিত, ঈশ্বরী আমার;

 

২৩.০৮০৮

 

 

 


 

 

 

 

উষ্ণতা কম্পিত হয়

 

তোমার ইচ্ছেরা অলিতে গলিতে সড়কে দালানে
ছিপছিপে সর্প যেন; নীল ভায়োলিন সুর তার
জমা রাখে বাম আস্তিনে।
তোমার ইচ্ছেরা
ঘাঁসের আলস্যে উষ্ণতা জানে।

তোমার ইচ্ছেরা জেগে আছে অরণ্যে
মৌয়ালের বাঁশের ঝাঁপির
চারপাশে উড়ন্ত মধুকীটের বিদ্রোহে
এবং সব অবসন্ন চিত্রকরের অবিন্যস্ত সময়ে
তোমার ইচ্ছেরা পর্যুদস্ত গোয়ের্নিকো
আর ঝুটিঅলা বালিকার গুন গুন গান যেন

তোমার ইচ্ছেরা নীল দরিয়ার
আব্বাসউদ্দীন নাম; আর জলের সার্শীতে
বেদনা-কম্পিত হরিণের ধাবমান চোখে- সোয়ানলেক
রাশান হংসব্যালে; তুমি-
তোমার ইচ্ছেরা যেমন

তুষার ঝড়ের সাদা অবসরে কৌনিক প্রাসাদ থেকে
আলোগুলো নিভে গেলে
ইচ্ছেরা নিরুদ্বিগ্ন হয় জেনে
তোমার শরীরের উষ্ণতা কম্পিত হয়

২৭.১১.০৮

 

নভেম্বর লাগোয়া গল্পগাঁথা

 

দৃষ্টি খুলে দিয়েছি, নিয়ে নাও বৈশাখী গান
আমি নভেম্বরের গল্প আর বনভোজনের শীল্পের
কথা কাউকে জানতে দেবো না। শীতের নিরব
প্রস্থানের কথা, আমি তোমাকে কোনদিন বলিনি।
তুমি সবুজ কার্পেটে গিয়ে যদি কোনদিন দাঁড়াতে পারো
চেখে নিতে পার খয়েরী ঘ্রাঁনের স্বাদ...
আমি অবিনয় ভঙ্গি ভুলে নিয়ে যাবো তোমার শরৎ

জ্যোৎস্নায় বেদনা ছুঁয়ে যদি তুমি ফেরাও
দৃষ্টি কমলরঞ্জিত গতকালের দিকে -চোখ তুলে-
আমি তবে শেষ গান ভুলে হৃদয়ের সমুল আশ্বাসে
তোমাকে এনে দেবো গহণ অরণ্যের শ্বাস;
প্রশ্বাস নিতে ভুলোনা নির্মোহ আঘ্রানের ভোরে
দৃষ্টি খুলে দিয়েছি শ্রাবণের জল নাও যুগল কোষে

তাকাও তুমি তারকা খচিত সন্ধ্যার দিকে যদি
সব নদী স্রোতের নামে বহমানতার গানে
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ নামাবে; তুমি চোখের পাপড়িতে
তুলে রেখে দিতে পারো নদীর শীতার্ত সেই গান;
অথবা পায়ে হেঁটে পার হতে পার হিম আলো, আমি
ত্রিসন্ধ্যার জপমন্ত্রে জেগে উঠে ফিরে পাবো সোনা
তুমি ভোররাতে একা শুয়ে নভেম্বর লাগোয়া গল্পগাঁথা

আমি কি অশেষ আশ্লেষে বিনয়ী ঈর্ষার লাল
কম্পাস নিয়ে ভাসিয়েছিলাম তরী তোমার ইচ্ছার দিকে?
নভেম্বরের শৈশ্নিক রাতে কী ঘটেছিল- আমি জানাই নি- হয়েছিল কি
স্বপ্ন বুনন- রাত্রি পেরিয়ে সকালের কাছে হাওয়া- কেউ তা জানে না
শতরঞ্চি বিছিয়ে কে চলে গিয়েছিল ঐশ্বরিক আনন্দে ভিজেয়ে
চোখ, কে সুর করে কেঁদে কেঁদে পথে বলেছিল- তোমার ভালো হোক
কেউ তা জানে নি- কেউ- জানে নি। আমি দৃষ্টি খুলে দিয়েছি
আষাঢ়ের মেঘ নাও, জল নাও, বৃষ্টি যাও শুধু রেখে।

নভেম্বরের গল্প কেউ কোন দিন জানে নি।



কবিতাটি
আমার ব্লগ হে শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল; এখানে কবিতাটি শিরোনামসহ আংশিক পরিবর্ধিত হল।

০৮.১১.০৮

 

 

 

 

স্যামসন

 

চোখ উপড়ে নিলেই কি অন্ধ করা যায়? সেই কদম ছাটা চুলে
কয়েদিরা প্রকাশ্যে ঘুরে ফিরে চৌরাস্তায়, শপিংমলে;
চুম্বনের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের চেয়েও ভয়াবহ। বেঁচে থাকতে
ইচ্ছে করলেও দেলায়ালা এসে আবদার করে জীবনের স্বাদ
সৌন্দর্যের অবয়বে নিহত প্রেমিকারা অনশন কোরে-টোরে
সমকামী হয়ে যায়; প্রথম যৌবনে অবশ্য প্রত্যেকেই অন্তত
এই আস্বাদ গ্রহন করে নেয় কয়েকবার। অভিমানে এভাবেই
বিষাদের কারাগারে মরে চলে স্যমসন; অথচ,
অক্ষত চোখে কেউ দ্যাখে না হত্যাকারীদের প্রকাশ্য চলাচল।

১১.০৬.০৮

 

 


 

 

 

ইমন, বাড়ী থাকিস তুই

 

 

ইমন, বাড়ী থাকিস তুই, আমি আসবো; শুনেছি,
তোর বাড়ীর কার্নিশ গলে বিন্দু বিন্দু জোছনা ঝরে পড়ে-
রাত্রি ভর তোর উদ্যাণ জুড়ে নিবেদিত হয়
কবিতার মতোন জোছনার রূপালী অর্ঘ

আমি দীর্ঘদিন জোছনাময় কবিতার নৈঃসর্গিক সংসর্গ থেকে
নির্বাসিত; বহুদূরে নিঃসঙ্গ একা...।
আমি- আমাকে ঘিরে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকার-
বহু আকাঙ্খা পেরিয়ে আসবো তোর উদ্যাণে
নৈঃশব্দ্যের কাছাকাছি;
তুই বাড়ী থাকিস, আমি আসবো;



(আমার বন্ধুটি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ, তার আরোগ্য কামনা করে
এই কবিতাটি তাকে উৎসর্গ করছি)

 

০৩.০৬.০৮