অলৌকিক ঈশ্বরের মতো

 

আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?
তোমরা অনেক ভালো ভালো ভাবনা
ভাব; মৃত্যুর গন্ধ বহুদিন হয় মুছে গ্যাছে
এখন স্বপ্ন দেখি উড়তে পারবে কাল
ফের ডানা ভাঙ্গা বাজ! তোমার শরীরের
মতো একটা আশ্রয় চাই!
না, ঠিক তোমার শরীরের মতো নয়
কিম্বা তোমার মতোও নয়,
ঈশ্বরের মতন। অলৌকিক ঈশ্বরের
মতো যে আশ্রয় স্বপ্নালোকের হাতছানি দ্যায়
বলে- আমাতে আশ্রয় কর, আমিই রক্ষা করিব;
সব মিথ্যা আমি ছাড়া।

এ সত্য সংকুচিত; অনুদার
এ সত্য মৃত্যুর পরের অযৌক্তিক প্রলোভন
আমি কি সেখানে যেতে পারি?

আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?
আমার অনেক দিনের ব্যর্থতাগুলো
আবার ডাক পাঠিয়েছে;

.০২.০৮

 

 

 

 

এটি একটি কবিতা হতে পারত
 

প্রগতি, রক্ত চাওনা আর?

কাস্তে আর হাতুড়ির দিন শেষ হলে পর কৃষক ঘুমিয়ে পড়ে অথৈ
অন্ধকারে আর হারকিউলিস মার্কা
পেশী নিয়ে শ্রমিক চলে যায় নিজের মর্চে পড়া মানবীর কাছে।
এরপর সংগ্রাম- বেঁচে থাকা বেঁচে থাকা খেলা।

আর আমি আরো অনেকের মতো প্রলেতারিয়েতের কথা বলার ছলে
লিখে যাই নাম কুড়ানোর ফন্দি।
কাস্তে কিংবা হাতুড়ি নিয়ে কখনো খেলিওনি; তবু সুনামে কাটে আমার দিন;

 

৩০.০১.০৮


 

 

একজন স্খলিত কবিকে মনে রেখে

 

বারান্দায় বিরূপ সময়ের প্রতিরূপ হয়ে বসে আছে
শেয়াল; নির্লিপ্ত সময় আশ্রয় খোঁজে গিয়ে লকলকে জিহ্বার
ছায়ায়। যুবক পেরিয়েছে চৌকাঠ- এতটা সময় পেছনে ফেলে
আসা গ্যাছে, এখনও বোধের দরজা খোলা হয়নি; তাই কৈশোরের
প্রেমিকার স্মৃতি এখনো বুকের মধ্যে এলোমেলো পায়চারি করে;
দু'চোখ বেয়ে নামে ভয়ের তুফান! যুবকের শরীরের মানচিত্র
কথা বলে ওঠে- দাঁড়াও, দাঁড়াও...। চমকে ওঠে শেয়ালের বাচ্চারা!
সচকিত হয় ঝোঁপের লতাগুল্ম সব। এই পথে কেবল শ্বাপদের আনাগোনা?
রোদ্দুর, বাতাস, আলোর যাবতীয় সুষম বন্টন শেষে ঢেঁকুর তুলেন
জনৈক; তাঁর যৌবন খেলা করে বাহারি বিছানায়; আর যুবকের বারান্দায়
শেয়াল রেখে যায় বিগত যৌবনের পূর্ণাঙ্গ নমুনা। এঙ সময়ের
নির্লিপ্ত নৈঃশব্দ্যে কারা যেন বলে ওঠে পুনরায়- দাঁড়াও, দাঁড়াও...!
 

৩০.০৫.০৮

সাঁজোয়া শহর
 

আমার শহর একদিন তোমার বন্দণায় হে প্রিয়তম
কতশত বিকেল করেছে পার; ব্যাস্ত হয়েছে সড়ক, অফিস পাড়া
মুখরিত ছিল; শোনা যায় এই শহরে সমাবেশে হিস্ হিস্
শব্দে গড়িয়ে পড়তো ক্লান্তির ঘাম
অরণ্যের মতো বিশাল অবয়বে ছিল স্বাধীনতার ঘ্রান; ছিল
সাহস আর পৌরুষদীপ্ত রাত্রির আঁধার। এখানে
মুখ লুকিয়ে কাঁদতো যারা তারাও মানুষের আত্মীয়
ছিল। তবু বরফের মতো সন্ধ্যা নামলে ঠিকই ঝড় নেমে আসতো
মানবিক গ্রন্থিতে; উষ্ণতার খোঁজে রমনীর কাঁখে
যদিও হাত যেতো চলে, যদিও নারীর জ্যোৎস্না হয়েছে হরণ
তবু এ শহরের চলাচল মানুষেরই ছিল। এ শহর আজ জলপাই
শাড়িতে জড়িয়ে শরীর সাঁজোয়ার সাজে মেতেছে খুব

তুমি নেই আর এ শহরে; শুনেছি তোমার খোঁজে, প্রিয়তমা, ঝানু গুপ্তচরও
হয়েছেন ব্যার্থ;

 

০২.০১০৮

 

আশ্চর্য এক মৃতের শহরে

 

আশ্চর্য এক মৃতের শহরে এসে দেখি লাশগুলো সব প্রতিবাদহীন নির্বিকার
সময়ের কাছে কারো কোন দায় নেই- এইভাবে পড়ে আছে।
আগুন অথবা মাটির জন্য নেই কোন আকুতি কিম্বা
বিদ্রোহ। অ্যাতদিন মানুষ জেনেছিল সৎকার না হলে লাশও বিদ্রোহ করে-
পঁচে গলে অস্থির করে ফেলে। অথচ এখানে কত নির্বিকার সবাই।
হিম ঘরের মতো লাশেরা এখানে অবিকৃত আর নির্লজ্জ। এদের ক্ষতির দিন
শেষ; তবুও এরা জীবিতের মতো ভীত আর আর সন্ত্রস্ত
দুরুদুরু বুকে শুয়ে আছে অন্তিম শয়নে!

শোনা যায় জীবন এখানে একদিন আপোষেই খুঁজছিল সুখ।

 

২১.০২.০৮

 

বিরহ প্রস্তাব

 

অভিসারী গান গায়- গানের কসম
ভোর হলে ফিরবো না; ফিরে যাবে গান

বিরহ চিনিনা; দেখিনা সুখ
নৈরাজ্যের আগে- ফালি ফালি
হয়ে থাকে সুখবোধের সোনালী ইশারা

বিরহ প্রস্তাব রাখি তোমার সমুখে
তুমি খোঁজ ইতিহাস আঁকাবাঁকা পথ
আমি তাই আঁধার মন্থনে হই নিরুদ্দেশ


০৩.০৯.০৮

 

পরা

 

যেখানে আমি আছি
দাঁড়িয়ে কিম্বা হাঁটুমুড়ে
তাকিয়ে অথবা চোখ বুজে
সেইখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি সম্রাটের মতো
অথবা অচ্ছুতের মতো নতজানু অপরাধী হয়ে

সেখানে কেউ নেই- ভগবান নেই
কোন ঈশ্বর কিম্বা অপরাপর স্রষ্টা নেই
বাইশ কোটি দেব-দেবীর একজনও নেই

সেইখানে সেই নির্বেদ সময়ে আমি আছি
শুধু আমি; আর
আমার ঘোলাটে রঙের চোখে
পরা পৃথিবীর সব আলো অথবা অন্ধকার

১৭.০২.০৮

জেগে ওঠে; তুমি পৈশাচিক উল্লাসে


হাতের তালুতে তুমি পৃথিবী আঁকা শিখে যাও-;

নিজের ভেতরে নিজস্ব নিয়ম বেড়ে ওঠা দেখে
সিগারেটের ধোঁয়ায় ভীষণ অহংকারী হয়ে যাই;
সেই ধোঁয়ার মধ্যে ভরে করে নাটকের
শেষ অংকের দিকে তুমুল ব্যাস্ততা নিয়ে
ধোঁয়াটে অনুপ্রবেশ ঘটে-;

আমার কব্জিতে বিদ্যুৎ খেলে যায়
তুমি নায়িকার সাজে মঞ্চ কাঁপাচ্ছো-;
ঘোর লাগা সংলাপ আর শরীরের চাতুর্যময়
সঞ্চালনে দর্শর সারি বিভিন্ন উল্লাসে মাতিয়ে রাখ
আমি আমি গৌন ভূমিকা নিয়ে কম্পমান মঞ্চে
গোপন আক্রোশ নিয়ে আরও ম্লান হতে থাকি

মঞ্চ জুড়ে কালো পর্দার ক্ষমা নামে:

সাজঘরে এসে এবার তোমার ম্লান হবার পালা
আমি আস্বস্ত হই, এবং ধোঁয়া ভেদ করে
ক্রমশ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠি; আমার পৌরুষ
স্বাতন্ত্রিক সত্ত্বায় জেগে ওঠে; তুমি সেই পৈচাশিক
উল্লাসে ভীষণ মানবিক হয়ে হাতের তালুতে দেখ-
মানুষ তার সঙ্ঘবদ্ধ আচরন থেকে সরে এসে
স্বাতন্ত্রিক পৃথিবী গড়ে তোলে;

 

০৪.০৯.০৮
 


 

 

     
 

 

আনন্দ ভ্রমণ

 

রাস্তায় ফিরে আসি; আধূনা পৃথিবী
শিস দিয়ে গান ধরে ট্রাকের হেল্পার
বিড়ি তার প্রসাধন নারকীয় প্রেম;
প্রধান আনন্দ তার ট্রিপ প্রতি পর
রঙণে শৃঙ্গারে রমনে পরস্ত্রী কর্ষণ
(আধুনা পৃথিবী তাই স্ত্রীও নয় কিঞ্চিতকর
স্বামীহীন শৃঙ্গারে তার বিনিদ্র ঘমার্ত ভ্রমন)
আধূনা পৃথিবী তাই ফিরে আসে সব
পথ তার রূপ পায়, পথিক সকল
রমনেই সুখ ভেবে আলিঙ্গনোৎসুক

মিথুন মৈথুন করে, হংস বলাকা
পক্ষিকূলও জানে রমন শৃঙ্গার ভ্রমন
পশুকূল জ্ঞাতিকূল, এ কূল সে কূল
পিতামহ রাম নাম জাপিবার কালে
পিতৃদেব ভাতৃদেব কণ্যা অবধি
কামরুপ কামাখ্যায় করিছে গমন;

অদৃষ্ট আধূনা তাই সড়কের ধারে
সংসার সংসার খেলা নির্ভিঘ্নেই চলে ;
হেল্পার বিড়ি ধরায় সাইড সিটে বসে
হৃদয়ে অনন্ত তার প্রেম লীলা চলে;
পরস্ত্রীর আলিঙ্গন ভীষণ মধূর
হাল্কা বাঁয়ে যাবে ট্রাক সতর্ক চালক;
ষ্টিয়ারিং ডান হাতে বাম পায়ে গতি
হৃদয়ে পরস্ত্রী রতি, ইচ্ছায় স্ত্রী সতি;

 

১৪.০৮.০৮