দি ডার্কেষ্ট নুন

সাদা কাশ বন ঘেঁষে সব সময় নদী কিম্বা
খাল, নিদেনপক্ষে নালা বয়ে যায়;
অথবা, এভাবেও বলা যায়:
নদী-খাল-নালার ধারেই কেবল ঘাঁসফুল ফোঁটে;

একদিন চৈত্রের রাতে
নিশীর ডাক শুনে সেই যে বেরিয়েছি
তারপর আর ফেরা হয়নি; সেই গাঙচিল
যার গলার স্বর নকল করতে চেয়েছিলাম
তাকে খুব মনে পড়ছে; কার জড়ানো বাহু অবহেলায়
ছেড়ে এসেছিলাম- মনে পড়ছেনা। কিম্বা
জননীর মুখচ্ছবিও গ্যাছি ভুলে। হিজল গাছের নিচে
খয়েরী পরাগের মাখামাখি; হিমরাত্রির মতো চুঁইয়ে পড়ে
তরল অন্ধকার। বিবিগ্ন দুর্বার মতো প্রহর গুনি
বিভ্রান্ত শরীরে সূর্য ছড়ায় বিস্বাদ লালা;
জননীর নিকট ফিরে যেতে লোভ হয়;
অথচ ভুলে গ্যাছি কাশবনের পথ!

তবু ছুটি উত্তর দক্ষিণ:
ফেনিল রৌদ্রের এই উড়োউড়ি থেমে যাক
অথবা, এই দুপুর এত অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্যানো?

.০২.০৮

 

 

 

 
 

ওদের জন্য মন কাঁদে; তুমি সাবধানে থেকো

আজাকাল তুমি কেমন আছো?
বিশেষ করে তোমার
দুপুরগুলো এখন কীভাবে কাটে?
এখনও কি বৌচি খেলার উঠোন ফাঁকাই পড়ে থাকে?
আর খালের পশ্চিম পাড়ের সেই গাছটি, আছে
এখনও? তোমার দুপুরের নির্জন রোদগুলো
এখন কী করে- খালে কিম্বা উঠোনে?

ভেবেছিলাম চিঠি দেবো তোমার দুপুর আর
উঠোনের কাছে; কিন্তু দেওয়া হয়নি।
শুনেছি তোমার মুমূর্ষু ডাকবাক্সটি বেশ কিছুদিন হলো
আত্মহত্যা করেছে। পশ্চিম পাড়ের গাছটিও নাকি
কয়েক দিন আগে জলে ডুবে মারা গ্যাছে?
ওদের জন্য মন কাঁদে; তুমি সাবধানে থেকো
দুপুর আর উঠোনকে একটু  চোখে  চোখে রেখো;

 

২৭.০৪.০৮

 

 
     

নিত্যতার প্রশস্তি

 


প্রকৃতি আমাকে বিরুদ্ধতায় দীক্ষিত করে। আমি প্রশস্ত অন্ধকারে
নিজেরই বিগত সত্ত্বাকে খুঁজি; হারানো সত্ত্বা জানে না
আসলে ভালোবাসার প্রতিবিম্বে ঘৃনার প্রচ্ছায়াই নিয়ত দন্ডায়মান।

 

***


বহুজনের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু যদি অভিন্ন কোন বোধে মেলে
সে বোধের পরাজয় সুনিশ্চিত হয় ভুল অভিমানে।

 

০১.০১.০৮

 

বিবর্তন


স্বেদার্ত আহ্বানে শৈশব থেকে এসে দেখি সে
সৌন্দর্যচর্চার গুঢ়তর সুত্র আবিষ্কারে ব্যাস্ত---
বক্ষদেশের বকুলদ্বয় ঘ্রাননালীর তেজারতি
কী করে আরো তীক্ষ্ণ করবে
সেই রসায়নের টাইট্রেশন এখন মগজে তার

এবঙ আমিও এ নাভী থেকে ও নাভীতে ব্যাস্ত
কস্তুরী মানবীর খোঁজে
.০১.০৮

 

শুন্যের ইতিহাস

 

১.
ছয় দশক ছিলাম অস্তিত্বহীন; সপ্তম দশকে এসে ঘুমের মধ্যে বস্তুগত আকার লাভ করি। এই সময়ে স্বপ্নের মধ্যে নীল রঙের এক গভীর মানবী এসে জানালো, শুন্যের দিকে যেতে হবে। এই আহ্বানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে করতেই দুইটি মুল্যবান দশক কেটে গেল। অতঃপর পঞ্চম দশকে এসে ঘুম চোখে শুন্যের দিকে মুখ ফেরালাম। দেখলাম, শুন্যহীন অন্ধকার;

তৃতীয় দশকে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে কয়েকটা বছর দেরী হয়ে গ্যালো। তারপর বিঘ্নহীন তোমার কাছে চলে আসি শুন্যতা, এবঙ অতঃপর তোমার আর আমার অদ্বৈত একীভবন; তারপর তোমাকে প্রসব যন্ত্রণায় রেখে ফিরতি পথ ধরি।
 

২.
চতুর্থ দশকের কথা ঠিক মনে পড়ছে না। শ্বাস নিতে গেলে ফুসফুসের মধ্যে কৃষ্ণগহ্বর নেমে আসতো

আহত পৃষ্ঠার মতো দিনে দিনে ম্লান পথ চলে নক্ষত্রের ঝড়ের মধ্যে ছিলাম ঠিক পৌনে এক দশক। এই দশকেই এসে ভয় পেয়ে বুক হিম হয়ে ওঠে আর ক্ষুধা থেকে উষ্ণতার কথা ভাবি।

 

.০১.০৮

 

     

বিষ্টির জন্নি কবিতায় সিনান

 

 

কী খরা নামিছে জমিনে তোমার; দেহের কোনায় কোনায়
একটুকুনও লাবন্য পাইনা খুঁইজে; কি বেহুদা খরায়
পরিছ তুমি! পুন্নিমার পহরে পহরে কীডা য্যান
কাইন্দা বেড়ায় খ্যাতের আইলে? কী শুকনা লাগে জমানা
তিয়াস লাগলে বাঁচন নাই।
কীডা য্যান কানতিছে হেই পাড়ে?

আইলের ধারে কে গো?
তুমি কীসের লাগি কত্তিছ অ্যাত দাপাদাপি
মাইঝ রাইতে এই চান্দির পহরে? ভুতে পাইছে নি?
নাকি লাগছে জ্বীনের আছর?

নারে ভাই, জ্বীনে আছর করে নাই
সিনান কইত্তেছি;
ম্যালা দিন ভিজিনা শ্যাষ রাইতের ঢলঢইল্যা জোছনাত

.০১.০৮

 


 

একখন্ড কবিতার দিন শেষ

 

মেধাবীরা ফিরে এসেছে আবার; গাছের ডালে কোন পেঁচা নেই আগের মতো।

উঠোন ভরা বিষন্নতা শুধু; একদিন সবাই জেনেছিল মেধাবীরা বিপন্ন হয়েছিল

জীবনানন্দ পড়ে। আজ দেখি নিশ্চন্ত ওরা; বর্ষণোদ্যত মেঘে ঢেকে গ্যাছে চাঁদ। আর

উঠোন ভরা শুধু আশংকার বাষ্প। অদূরে নদীর পাড় ভাঙ্গার শব্দ ক্রমশ চলে আসছে

আরও নিকটে।


একখন্ড কবিতার দিন শেষ, আবার বিপন্ন শাখিল!

দেখি মেধাবীরা সব লাইফ-জ্যাকেট পরে বসে আছে নিশ্চিন্তে নৌকায়। আর মাঝি

এবঙ ন্যায্য যাত্রীরা সব উঠোনে বসে হাত তুলে কাজে যেন (বোধ হয় ঈশ্বরকে)

বলছে- বাঁচাও, বাঁচাও...

মেধাবীরা আজ জীবনানন্দ ভুলে ভালোবেসেছে নিজের জীবনকে শুধু

২৮.০২.০৮

     

আমার নগ্ন অভিমান

 


ভাবতে ভাবতে বহুদিন দিন চলে যাবে। ঈগলের নখে রক্তের দাগ আরও বাড়তে থাকবে; তবু মাঠে ইঁদুরের দল খেলবেই। বাঁসি শিশির ঝেড়ে রৌদ্র পোহায় ঘাঁসফুল। অথচ জানে না সিংহ আসছে তেড়ে শাবকের দিকে ক্ষুধার্ত পাকস্থলি নিয়ে; অনেকদিন চলে গ্যাছে। অনেকদিন চলে গ্যাছে আমাদের। আমরা আর ফিরে তাকাবো না ফের। বনে শ্বাপদ, জলে অতলতার সর্বনাশ গ্রাস, বাতাসে মৃত্যু: এইখানে সীমান্তের দাগ কাটে আমার অভিমান। অনেকদিন চলে গ্যাছে আমাদের। আমরা আর ফিরে তাকাবো না ফের

 

***


মাটির বুকের কাছে শুয়ে আছে আমার অভিমানেরা নগ্ন প্রতিবাদে। লালা ঝরছে সময়ের আগে থাকা বিবেক থেকে। তাল মেলাতে পারিনি- প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম একদিন, আগুনের সাথে পথ চলবো। জোছনায় আলোকিত পথে হেঁটে ফাঁকি দিতে গিয়ে বন্দি। বিবেক তীর্যক চোখে তাকিয়ে এখন। মাটির সোঁদা গন্ধের কাছে ফিরে যেতে লোভ হয়।

 

***


অভিমানও যেখানে স্বরলিপি মেনে চলে সেখানে আগামী লাল থাকে না। নীল অন্ধকারের কথা সবাই ভুলে গেলে আমি তোমাকে ভালোবাসার কথা জানাবো, এই ভেবে নীল ফুল সব মঞ্জরিত শাখা থেকে ঝরে গ্যালো; কিন্তু আমি স্বরলিপি মানিনি।

 

২৩.০২.০৮


 


 

 

     

ঘৃনা


যাকে 'পেয়েছি' অথবা 'পাবো না' বলে একদিন হাহাকার করেছি
সে আজ হাতের মুঠোয় কিলবিল করছে

আমি নির্বিকারে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি দূরতম দৃশ্যের দিকে

বিবর্তন.
স্বেদার্ত আহ্বানে শৈশব থেকে এসে দেখি সে
সৌন্দর্যচর্চার গুঢ়তর সুত্র আবিষ্কারে ব্যাস্ত---
বক্ষদেশের বকুলদ্বয় ঘ্রাননালীর তেজারতি
কী করে আরো তীক্ষ্ণ করবে
সেই রসায়নের টাইট্রেশন এখন মগজে তার

এবঙ আমিও এ নাভী থেকে ও নাভীতে ব্যাস্ত
কস্তুরী মানবীর খোঁজে

 

০৮.০৮.০৮

 

 

 

 

সংক্ষিপ্ত শিরোণামে ম্রিয়মান শহরের দৃশ্যপট

 

 

শহর তার পূর্বজদের ঋণে ভারাক্রান্ত বেশ। আর মেদের একচ্ছত্র আধিপত্যে মহিলারা-

তুমি এই শহরে আবিষ্কার করে চলছো পালঙ্কের সূদীর্ঘ ইতিহাস। তোমার মধ্যে ছিল স্বপ্নের বিভিন্ন রঙ, শিল্পকলার মতো আমৃত্যু অহংকার। চোখে বিজুলির চমক। রূপালী ঠোঁটে যখন হাসি ফোঁটাও তখন আমরা কিয়ৎকাল শহরের সাম্প্রতিক ম্রিয়মানতাকে ভুলে থাকি। তুমি স্বীকারই কর না সোডিয়াম লাইট উৎকট হতে পারে কখনও; তুমি মানতেই রাজি নও নগর এক বিরাট উপনিবেশ। বরং নিয়ন আলোয় তোমার নিবিড় স্বাচ্ছন্দ্য- আমাদের বুকে ভীষণ জ্বালা ধরায়-

(শহরের ঋণ আর শরীরের ঋণ নাগরীক শয্যায় একীভূত হয়) নিয়ন পর্দার ভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিরে আসবে চর্বি সর্বস্ব এক মহিলা। তুমি আমাদের হৃদয়ে রূপালী ঝর্না এখন।

বড় বেশী আকাঙ্খা প্রিয় নারী, তুমি;

 

১১.০৯.০৮