নীল রঙ মানবী; অসমাপ্ত সংলাপে

 

 

ছয়টি অধ্যায়ের শুরু এইভাবে: নিজেকে ঈশ্বর জেনে
সর্বশেষ নির্দেশ ছিল গভীর ইচ্ছা থেকে সরিয়ে নেওয়া -

বায়ুমন্ডলের সমস্ত দুর্বার্তা আঞ্চলিক আকাশে স্থান দিয়ে
মানুষ গোত্রীয় একপাল মানুষ অনবরত মানুষই উৎপাদনে লিপ্ত
ছিলো। কিন্তু, শরীরের ক্ষুধাকে অরক্ষণীয়া রাখা যায়না
বিধায় মাঝে মধ্যে কিম্বা প্রায়শই অথবা
বিধি মোতাবেক শুদ্ধ করে চলে গায়েবী আওয়াজ।

সেইতো ছিলো ভালো; পঞ্চম বার যখন চুম্বন শেষ করে
পরবর্তি অধ্যায়ে হাত বাড়াচ্ছিলাম, তখনই আকাশে
কুজ্ঝটিকার ব্যতিব্যাস্ত আয়োজন। বিরাট এক ঈগল
পাহারায় নিয়োজিত ছিল; তাই মানচিত্র আঁকা হয়নি।

নীল শাড়ি থেকে নীল আগুন যতই উড়ুক
রাত তবু রাতই থাকে; রৌদ্র নিবে গেলে দিন
মাহাত্ম্য হারায়না। জ্বলে উঠে তুমি রাতবিরেতে
কমনীয়ই হবে ফের হে উদ্ধত মানবী; তোমার চোখে
ঘৃনার আগুনই জ্বলে! আর সেই আগুনে
পঙ্গপাল সব আনন্দ খোঁজে; মরে।

আর তুমি, নারী, সব সংলাপ অসমাপ্ত রেখে
চলে যাও দক্ষিণমুখী রাস্তা ধরে, পায়ে পায়ে তোমার
নুড়ি পাথরের দাগ দগদগে ক্ষত হয়ে আর্তচিৎকার করে;---

দৃশপট এইখানে শেষ হয়ে গেলে হ'তো; কিন্তু আরো আরো
গোপন দরজা খুলে অবশিষ্ট সংলাপ অবাধ্য বাদুর হয়ে উড়ে চলে যায়

মানুষ তখনও বোধ নামক আশ্চর্য ঈর্ষায় ডুব দিয়ে থাকে।

 

০৮.০৬.০৮

 

 

 

 

গোধূলীর যুবরাজের হাত

 

সেইসব শকুনেরা উড়ছে; আকাশ চষে বেড়াচ্ছে তারা
যাদের নখে এবঙ ঠোঁটে এমনকি পাকস্থলীতে এখনও
দাগ লেগে আছে মাংসের। শিরাপুঞ্জে প্রবাহিত রক্ত
তোমাকে দিলাম। জননী, এখনও তুমি প্রসব করো
বদমায়েশ; দালাল। জননী, তোমার জঠর কি অভিশপ্ত?

না, প্রজননে কোন ভেদ নেই। ভেদ আছে কিছু লালনে
আর প্রতিপালনে। জননী, আমাদের প্রতিপালকেরা
কেউ কেউ আত্মমগ্ন হয়ে দারুন নির্বিকার। কেউ কেউ
(অনেকেই) লুন্ঠিত, হতাশ, দিকপালের ভুল ইশারায়।
না, এই দিকপাল তোমার হিরন্ময় প্রসবেরা নয়।

কেউ কেউ অ্যাখনও স্বপ্নের হাতে নিহত হতে হতে
তোমার লুন্ঠিত বস্ত্র খুঁজে ফেরে বিচ্ছিন্ন। আর দু'এক জন
ধার করা গোধূলীর রঙ মেখে গায়ে তোমাকে সাজাবে বলে
রুগ্ন শরীর থেকে আপোষেই খুলে নিচ্ছে নিবিড় রোমরাজি
তোমার। আর মুখে বলছে তোমাকে সাজাবে বিকেলের রঙে।

তাদের হাতে পশম দেখেছো নিশ্চই? চমকে গিয়েছো?
হ্যাঁ, এরা তোমারই প্রসব; ওদের শরীরের রোমগুলো
একদিন মানুষেরই ছিলো। কোন এক অজ্ঞাত কারণে
ওগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে দানবীয় রূপে।
জননী তুমি; তাই তুমিই বুঝেছো। আমরা এখনও তাদের

ত্রাতাই ভাবি। ওদের হাতেই কিন্তু অগোচরে জিরোয় শকুনেরা।

 

০৭.০৬.০৮

 

 

 

 

 

মাধূকরী

 

তোকে যেতে দিই-;
যেতে দিতে দিতে
পশ্চাতে তোর
সূর্যাস্ত মেলে দিই;

তোর সমস্ত আয়োজন
নৈবদ্যের ডালি
সিঁদুর মাখা সিঁথিতে;
আমি তবু
তোর চুম্বন চাই ভিক
প্রেম-মাধূকরী রচিতে;

তোর চোখ শত্রুর মতোন
কেবলি প্লাবিত হয়
আঁখি-তারা হেরি তাই
আমারও আঁখি রাত্রিভর জেগে রয়

যেতে যদি চাস
চলে যা- রাখবোনা আর ধরে;
শুধু ভেবে দেখ, কার অজুহাত
অনুরাগে তুই রাখবি আঁচল ভরে;

আমারে এড়াবি? পারবি না তুই;
তোর সে সাধ্য কোই
হৃদয়ে তোর হৃৎপিন্ড নামে
আমিইতো স্পন্দিত হই;

৩০.০৪.০৮

 

 

 

 

মাছি

 

সবুজ ওড়নায় হাত মুছে ফেলে পৃথিবীর দিকে ফিরে আস।
কিছু আহত পাখির স্বর তোমার প্রতীক্ষা করেছিল ঐ বেলা;
তুমি, তোমার মধ্যে বিষয়ের যে অঙ্কুরোদগম
তুমি, তোমার বাহুতে যে পয়ারের ঢং
তুমি, তোমার আলিঙ্গনে মাতৃভাষার মতো যে আন্দোলন
তার জন্য সর্বক্ষণ আমি অপরাধী হয়ে থাকি। আর
অপরাধীর চোখ দিয়ে তোমার গায়েবী আনন্দ দেখি, লিলিয়ান;

এবং আমার অপরাধের মধ্য থেকে জন্ম নেয় এক নারী;
লিলিয়ান, তোমার সবুজ ওড়নার থেকে
আমার নিকট অধিক গ্রহনযোগ্য এই রমনীর গোলাপী লিপষ্টিক রং।
কারণ ঐ রং আমার দিকে প্রশ্নের মতো তাকায়
আর আমি তৎক্ষনাত ধন্য হই। উপচে পড়া মৌচাক
থেকে মধু পান করে তাই লিলিয়ান, আমি আর
কবিতা লিখি না। বরং কবিতার মধ্যে নীল রঙের
মাছি ওড়া দেখে নিজেকে চিনে নেই।

০১.০৬.০৮

 

 

 

 

মনোকষ্টে

 

 (ঈশ্বর তাঁর পুত্রের হাতে পেরেক বিঁধিয়ে
মানুষকে শেখান বহুবিধ বিভ্রান্তির নৃত্য-কৌশল)

ফিরে আসার মতো দাঁড়িয়ে থাকি;

বৃক্ষের মতো প্রতিশ্রুত হও-
কেশের বিন্যাসে
তবু অজগর বেড়ে ওঠে

(মানুষ অংকিত হয় দেবতার নামে
প্রেরিত প্রেরনার ভ্রান্ত আয়োজনে)

আমাদের জলজ প্রেমেও বিশ্বাসের মতো শ্যাওলা ভাসে;

 

০৪.০৭.০৮

 


প্রেম

 

 

এখন অন্ধকার; মানুষের সব রঙ মুছে যাবে।
ঘনায়মান অন্ধাকারে জিয়ন কাঠির আভা নিভে যাবে।

অস্তমান গোধূলী শেষ হলে ফুলের সৌরভের মতো-
কোন কোন প্রেমিকার মতো
অন্ধকার উঠবে ভরে মানুষীর ঘ্রানে- মানুষের ঘ্রানে

অ্যাখন সমুদ্রে আঁধার:
প্রেয়সীর থৈ থৈ জলে জ্যোৎস্নার আকাঙ্খা

অ্যাখন রাত্রি:
ভীষন রাত্রি রমনীর চুলের দৈর্ঘের বিস্তীর্ন ভাঁজে

অ্যাখন সময়:
মানুষ আর মানুষীর সন্তর্পণ আলিঙ্গনের অদ্বৈত একীভবন

 

২৫.০৫.০৮

 


 


 

 

 

একটি পংক্তির জন্য

 

 

তোমাকে দেবো বলে
গতকাল রাত থেকে চেস্টা করছি
কাটাকুটি হচ্ছে প্রচুর- ভুল বানান, ভুল উপমা..
তোমার জন্য, তোমার যোগ্য কোন পংক্তিই পাচ্ছি না খুঁজে
গতকাল রাতে বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল
ভেবেছিলাম, রাতের মধ্যেই একটি দুর্দান্ত পংক্তি
রচিত হয়ে যাবে- হয়নি;
আজ সকাল থেকেই ভ্যাপসা গরম
সমস্ত রোমকূপ অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করছে-
এইসব চিৎকার অগ্রাহ্য করে
আমি বসে আছি
সামনে খাতা- অজস্র কাটাকুটি অঙকিত
মাটির সোঁদা গন্ধ আসছে ভেসে
অচেনা একটি পাখি আর্তনাদ করছে তারস্বরে
কিন্তু, এইসবে তো কোন লাভ নেই-
পংক্তি চাই; একটি আশ্চর্য সুন্দর পংক্তি-
আমি তোমাকে দেবো;

কিছু কিছু পংক্তি ভিড় করে মস্তিস্কে; কিন্তু
ওগুলো তোমার অনুপযুক্ত,
অমার্জিত, অশোভন বলে মনে হয়
দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে...
আকাশে মেঘ জমতে আরম্ভ করেছে
বৃষ্টি আসবে
চারিদিকে ব্যঙের কোলাহল
সবুজে সবুজ, প্রান্তরময় ঘাঁসফুল
পুকুরের জলে নিবিড় স্নিগ্ধ ঢেউ...
যাবতীয় পূর্ণতা চারপাশে; অথচ
একটি মাত্র পংক্তি-
তোমার যোগ্য-
কিছুতেই লিখে উঠতে পারছি না এখনও

দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে। যাক;
আমি বসে থাকবো-;
দিন
মাস
বছর চলে যাক;
যত সময়ই লাগুক, একটি পংক্তি-
তোমার যোগ্য- আমি অবশ্যই রচনা করবো।

একটি পংক্তির জন্য আমি
এই বৈশাখ থেকে অনন্ত বৈশাখ অবধি বসে থাকবো অবিচল;

 

২৫.০৪.০৮

 

     

সমকালিন

আঁধার ছুঁয়েছে হৃদয়: এই আঁধারে কবিতা লেখার
অফুরন্ত অবসর। আমার ক্ষতির দিন শেষ,
নির্ভাবনায় থাকি সর্বক্ষণ- শৈশবের মতো।
শৈশব হাত ছানি দেয়- চোখের বিভ্রম-জানি-
বার্ধক্যই অনিবার্য বিলম্বিত মৃত্যুতে। সূর্য-প্যাঁচার
শত্রুতার মতোন কোটরগত সব-সমস্ত আশা, স্বপ্ন।
নৈরাজ্যের সাথে দীর্ঘ রতিবাস- উদ্যমহীনতা
আশু উত্তরাধিকার দারী রাখে। বুদ্ধের সরন
না নিয়েও নির্লিপ্ততার নির্বান গ্রহনে অকুন্ঠ সমকালিন
... আমি।

প্রাণিত আঁধারের প্রচ্ছন্ন প্রতিবেশ ছুঁয়ে
স্বপ্নগুলো কবর দিতে ভালোই লাগে।
১২.১০.০৮

 

 

তোমাকে; উৎসের দিকে

 

তোমাকে উৎকন্ঠিত দিবসের মধ্যভাগে দেখি

এবার শ্বাস নিতে পারো অবলীলায়;
তোমার শ্বাসযন্ত্রের এতদিনকার বিরুদ্ধতা
অবশেষে আমাকে অতিক্রম করে গেছে;

সোনালী চুম্বনের পাত্র হাতে
অবয়ব সর্বস্ব বিষয় থেকে
মুখ তুলে এই দিকে তাকাও

তোমার দিকে আমি আবহমান অস্তিত্বের উৎস খুঁজি;

২৭.০৮.০৮

 

     
 

কাঁটার শীর্ষে বিম্বিত হও

 

আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে...

রৌদ্রজ্জ্বোল হও সলিলাবৃত তমসার অভ্যন্তরে
আমার অনিদ্র রূপাশ্রয়ের বোধিসত্বে
তোমার হৃদয়ের চর্যা গান বেজে ওঠে
তুমি রৌদ্রজ্জ্বোল হও-

তোমার নামে আকাশে ঝড় ওঠে
মৃত্তিকার দ্বন্দ্বে বাড়ে বৃক্ষ
তোমার কন্ঠস্বরে আলো ভাঙ্গে অস্বচ্ছ্ব প্রিজম
তুমি রৌদ্রজ্জ্বোল হও-

বর্শা ফলায় তোমার নামের সংযুক্তি
দিবসের মধ্যাহ্নের সূর্য হায়
তুমি আমাদের হৃদয়ের তরল আগুন
শীতরাতের উষ্ণতার গান

সমুদ্র তলের স্বচ্চ বালুর ঝিলিক
তোমার আনন্দিত চোখে জ্বলে
তোমার নামে রক্তের মতো শিশির ঝরে
ঘাঁসে, ফুলে, ওষ্ঠের আঙ্গিনায়

তুমি রৌদ্রজ্জ্বোল হও;
তোমার নামে নিশি ভোর হয়
তোমার নামে আমাদের প্রথম সূর্যোদয়
তুমি রৌদ্রজ্জ্বোল হও রক্তরাগে-

তুমি সুতীক্ষ্ণ কাঁটার শীর্ষে বিম্বিত হও, হে বিনম্র সুন্দর;

২৩.১০.০৮

 

দাগলাগা শিরোণাম

 

আমার হতাশর পাশ ঘেঁষে যে নিরন্তর প্রবাহমানতা
তুমি তা কোনদিন দেখনি। নৈঃশব্দের মতো আমার
শপথগুলো নিরর্থক মনে হতে পারে- আমি জানি
মুখ খুলে সবই বলতে হয় তোমাকে, নাহলে বোঝনা
আমার প্রেমিক অক্ষরগুলোর আর্তনাদ; অরণ্যে,
বৃষ্টিতে, তুমি দেখনি আমার সূর্যোদয় থেকে
সূর্যাস্তের দিকে হেঁটে যাওয়া; তুমি ভাবনি
হা-ভাতের আর্তিতে কী ভীষন এক সূর্য
আমাদের সোনার সূর্যের রক্তললাট লেখা।

শীতনিদ্রায় আছি যদি ভাব
অচ্ছুত হয়ে আছি যদি ভাব
আঁধারে নিয়ত ডুবে ডুবে নির্জন হয়ে আছি
যদি ভাব- তবে আমার অট্টহাসিতে শুনে নাও-

জ্বলে উঠিনি বলে ভেবোনা আগ্নেয়গিরি নই।

৩০.১০.০৮

 

বিরহ প্রস্তাব

অভিসারী গান গায়- গানের কসম
ভোর হলে ফিরবো না; ফিরে যাবে গান

বিরহ চিনিনা; দেখিনা সুখ
নৈরাজ্যের আগে- ফালি ফালি
হয়ে থাকে সুখবোধের সোনালী ইশারা

বিরহ প্রস্তাব রাখি তোমার সমুখে
তুমি খোঁজ ইতিহাস আঁকাবাঁকা পথ
আমি তাই আঁধার মন্থনে হই নিরুদ্দেশ

 ০৩.০৯.০৮