দৃশ্যকল্পে বৃত্ত রেখে কবির পিথাগোরাস হয়ে ওঠা

 

 

বৃত্তের বাইরে অনুরনিত হয় শব্দ; নীল রঙের শব্দ-;
আপাত দৃষ্টিতে এটা অবৈজ্ঞানিক মনে হলেও
এই দৃশ্যকল্পে শব্দের রঙ নীলই;

এই শব্দ কখনও বৃত্তের ভেতরে যায়না; ঢুকতে পারে না।
কারন বৃত্তের ভেতরটা মুলত অন্ধকার; (সব আবদ্ধতাই অন্ধকার)
যেহেতু অন্ধকার মানে রঙহীনতা; ফলশ্রুতিতে
বৃত্ত নীল রঙ শুষে নেয়। আর যেহেতু
এই দৃশ্যকল্পে রঙহীন শব্দ হয় না
তাই বৃত্তের ভেতর কোন শব্দ থাকতে পারে না।
অর্থাৎ বৃত্তের বাইরে অন্তত একটি শব্দ থাকলেও
ভেতরটায় কেবলি রঙহীন নির্দয় তমসা;

তাই আমি, অর্থাৎ এই কবিতার কবি
বৃত্ত সম্পর্কে যখনই ভাবি
তখন নিজেকে বৃত্তের বাইরে রেখেই ভাবতে চাই-

পিথাগোরাসও কি তাঁর বৃত্ত সম্পর্কিয় ভাবনাগুলো এভাবেই ভাবতে পছন্দ করতেন?

২৭.০৬.০৮

 

 

 

 

 

 

চলো, আবার আকাশে সময় নির্মান করে যাই
 

 

 

চলো, আবার আকাশে সময় নির্মান করে যাই

সময়, তুমি একক ঈশ্বর। শুধু তোমার শেকড় যদি জানা যেতো তবে আর কোন ঈশ্বরই বস্তুত প্রকাশ পেতেন না। ভয় আর লোভ আমাদের মজ্জাগত- মস্তিস্কের কোষে কোষে পিটুইটারির গ্রন্থ্যি ছাড়িয়ে এই বিশ্বাস এখন আসলে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণহীন বলা চলে। সময়, তুমি এইসব দেখনা; তোমার দেখারও নয়। এমনকি এই কবিতা প্রলাপের মতো কাগজে সেঁটে থাকবে; তুমি জীব কিম্বা জড়ও নয়। অলৌকিক বিশ্বাসও নও। তুমি শুধুই প্রবাহমানতা। শুধুই প্রবাহ; নিশ্চেষ্ট, নিরর্থক।

কেবল আমি জেগে উঠলেই তুমি অস্তিত্বমান হও
 

১৯.০৩.০৮

 

 

 

 

 

নগর

 

তীর্যক সত্যকে উপেক্ষা করে বিদায়ী হরিণ
আশ্রয় টানে নিবিড় ধূসর; টেলিফোনে রোমান্স খ্যালে
সদ্য টিন-এজ পেরুনো যুবক। মধ্যবিত্ত অনুভব ভুলে যেতে চায়
কৌটিল্যের জটিল অংক; - মুহূর্তগুলোই প্রাধান্য পায়।
আবার ফিরে আসে ১০০ কোটি বৎসরের
পুরোনো সূর্য টকটকে; চকিতে হরিণের মনে পড়ে যায় সবুজ
মধ্যবিত্ত দুঃখ ফিরে আসে যুবকের কাঁধে আর চোয়ালের হাঁড়ে
আর তন্দ্রার পাশ ঘেঁষে বসে থাকে নাগরিক বোধ।


সূর্য আর কৌটিল্যের প্রখরতায় পুড়ছে নগর।

১৮.০৪.০৮

 

 

 

 

কখনও বৃষ্টির বিকেলের কথা

 

নাগরীক দুপুরে ভিজে যায় ঋতু; দোকানপাট, গোস্ত কাটার ছুরি,
পথে হাঁটা পথ কখনও কখনও ভেজে বৃষ্টিতে। দেবদারুর মতোন
উর্ধ্বমুখে তাকিয়ে কখনও কখনও ভিজে চলে একটানা একটি মানুষ;
-মানুষ, তুমি কি দাঁড় কাক? তুমি কি বিদ্যুতের ধাতব থাম?

জৈষ্ঠের বিমুগ্ধ বিকেল লজ্জিত নারীর মতোন রক্তিম চিত্রকল্প আঁকে
পশ্চিমের দিগন্তে। গোধূলীতে মিশে যায় কাঠাল পাতা,
গয়াম গাছে বাসা বাঁধা দোয়েলের স্বর, সুউচ্চ দালানের চুড়া;
কোথাও কোন শব্দ মিশে গেছে বলে, মনে হয়, অনন্ত গোধূলী;

বৃষ্টির জলে ফসল শেষের ঊষর মাঠ ভিজে বোনে সবুজ কার্পেট;
বৃষ্টির জলে শহুরে কাদায় কিলবিল করে দৈনন্দিন ব্যস্ততার স্তুপ;
বর্জ্য আর মজা- মশকের ডিম পারা- পানির সাবলিল ধারার মধ্যেও
তাই কখনও কখনও বৃষ্টির বিকেলের কথা মনে পড়ে গেলে

নাগরিক যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলে মানুষ ভিজে চলে অঝোর বৃষ্টিতে

 

২৭.০৫.০৮

 

 

 

 

একমুঠো অন্ধকারের চিত্রকল্প

মৃত্যুর গন্ধের মতো অভিশাপ বেড়ে ওঠে দেওয়ালের প্রান্ত বেয়ে।
হৃদয়ে সুগন্ধী রুমাল মেখে দুঃসময় এড়াতে চায়
ওপাড়ের বিষন্ন শালিক; বিক্ষুব্ধ একদল পেঁচার শরীরে ‌'অন্ধকার'
তোলা ছিল বলে বিপন্ন হ'ল মশরুম জাতি। উদাসীন শ্যাওলাও নামে
জবরদখলের খেলার মাঠে। মাতৃস্তন চোষা জিহ্বায়
মাতৃ-রক্তের আকাঙ্খা জাগে অগোচরে। শ্বাপদের মতো
ধুর্ত হয় হাত ও পায়ের নখগুলো। অব্যর্থ
ব্যর্থতা বারবার ফিরে আসে প্রেম ও প্রেমির কাছে।
নতজানু কাশের সামনে এসে ভীড় করে নতজানু একদল পুষ্ট মানুষ;
পুরুষ লিঙ্গের কাছে হাত রেখে বলে-- ক্ষমা কর, ক্ষমা কর...
আদিম বাসনা নগ্ন হয়ে হাসে শুভ্র শাড়ির আড়ালে এবঙ পুরুষ
খুশি হয়ে চলে যায় বিধবার কাছে ক্ষমা নিতে। পাথর ফেটে জল অথবা
মন্দিরে সাপ উঠলেই অলৌকিক ঈশ্বর প্রকাশিত হ'ন। দল বেঁধে
পুষ্ট মানুষ সব নতজানু হয় আবার অন্ধকারের কাছে।

 

০৪.০৭.০৮

 

একজন স্খলিত কবিকে মনে রেখে

 

বারান্দায় বিরূপ সময়ের প্রতিরূপ হয়ে বসে আছে
শেয়াল; নির্লিপ্ত সময় আশ্রয় খোঁজে গিয়ে লকলকে জিহ্বার
ছায়ায়। যুবক পেরিয়েছে চৌকাঠ- এতটা সময় পেছনে ফেলে
আসা গ্যাছে, এখনও বোধের দরজা খোলা হয়নি; তাই কৈশোরের
প্রেমিকার স্মৃতি এখনো বুকের মধ্যে এলোমেলো পায়চারি করে;
দু'চোখ বেয়ে নামে ভয়ের তুফান! যুবকের শরীরের মানচিত্র
কথা বলে ওঠে- দাঁড়াও, দাঁড়াও...। চমকে ওঠে শেয়ালের বাচ্চারা!
সচকিত হয় ঝোঁপের লতাগুল্ম সব। এই পথে কেবল শ্বাপদের আনাগোনা?
রোদ্দুর, বাতাস, আলোর যাবতীয় সুষম বন্টন শেষে ঢেঁকুর তুলেন
জনৈক; তাঁর যৌবন খেলা করে বাহারি বিছানায়; আর যুবকের বারান্দায়
শেয়াল রেখে যায় বিগত যৌবনের পূর্ণাঙ্গ নমুনা। এঙ সময়ের
নির্লিপ্ত নৈঃশব্দ্যে কারা যেন বলে ওঠে পুনরায়- দাঁড়াও, দাঁড়াও...!

 

৩০.০৫.০৮


 


 

 

 

ফিরে আসার মতো দাঁড়িয়ে থাকি; প্রাসঙ্গিকতার পরিবর্তনে

কেউ কি ফেরে?

উঁই পোকার ঢিবির মতো এবড়ো-থেবড়ো স্মৃতি থেকে কেউ কেউ ফেরে; অনেকই ফেরে না- দাঁড়িয়ে থাকে স্মরণের পরিধির বাইরে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে।

যারা ফেরে তারা দেখে মগডাল থেকে পায়রা চুরি যায়- আমাদের বিভিন্ন রঙের পায়রাগুলি। এর মধ্যে বিখ্যাত সাদা পায়রারা মরে গেলে- তোমরা যারা ফিরে আস- এমনভাবে বিলাপ করো যেন ওগুলো এইমাত্র নিহত হলো। অথচ নীল রঙের ঝুঁটি অলা কবুতরেরা এ্যাতদিন ধরে নিহত হয়ে চলছে, তাতে তোমাদের বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই; যেন এখানে সকল দায় আমার- কেবল আমার- যেহেতু আমিই নীল রঙের মানবীর শরীরের ভাঁজ থেকে এগুলোকে অবমুক্ত করেছিলাম ডালে ডালে বসবার জন্য।

এবং আর যারা দাঁড়িয়ে থাকে এইসব কেন্দ্রাকর্ষী পরিধির বাইরে, তারা নিহত হওয়া আর মরে যাওয়ার মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন রেখার নিঃশব্দ ইতিহাস জেনেও দ্বান্দ্বিক প্রশ্ন তোলে:

ফিরে আসা, না, দাঁড়িয়ে থাকা?


(নিজের কবিতা নিয়ে মাঝে মাঝেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই; আমার একটি কবিতায় শুরু করেছিলাম, ফিরে আসার মতো দাঁড়িয়ে থাকি, এই পংক্তিটি দিয়ে; কিন্তু হঠাৎ করে এই পংক্তিটির অর্থ আমার কাছে পাল্টে যেতে লাগলো, তাই এই পংক্তিটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নতুন করে ভাবছি)

 

২৯.০৭.০৮

 

 

     

কোথাও কি কথা ছিল কোন

 

কোথাও কি কথা ছিল কোন? কেউ কি বলেছিল
প্রভাতের মর্মরে গাইতে রাগভৈরবী? কেউ বলেনি;

স্বপ্রনোদিত উৎসবে মানুষের এই আয়োজন স্বতোৎসারিত;
পরিধি অতিক্রমের দুর্জয় ইচ্ছায় মুষ্ঠিবদ্ধ হাত
মানুষের বেদনা মানুষকে নামিয়েছে মিছিলে একদিন;

আজও সেই মিছিল আজও সেই বেদনা
আজও সেই কান্না প্রতিধ্বনির মতো
মানুষের সাথে সাথে সাংসারিক সংলাপে ফেরে।

যারা ভাবে ঢিলে হয়ে গ্যাছে সেইসব মুষ্ঠিবদ্ধতা
যারা জানে মানুষের কখনও আর মিছিল হয় না
যারা বলে ফেরে মুক্তি আমাদের নেই কোন দিন
তাদের উদ্দেশ্যে ঘৃনা রেখে
এইসব অনুভবে আমারও রক্তে বান আসে
অসহ্য রাত পেরুনো ইস্তেহার পড়ে
লাল ফিতা মগজে বাঁধি...

কোথাও কি কথা ছিল কোন? মুখোমুখী আঁধারে
কাস্তে আর হাতুড়ির প্রতিধ্বনি ক্রমশঃই বাড়ছে!

১৮.১০.০৮

 

রাজর্শি পাখি, বিপরীতে আমি, অথবা

 

আমারই অস্থি থেকে জন্ম; গঢ়ুড় নয়, রাজর্শি পাখি
আমি
অথবা আমরা
আমাদের দীর্ঘ নিদ্রায় সূর্য চুরি হয়ে গ্যাছে;
মালিকানা আর আমাদের নয়; আমাদের
ডানাগুলো নিয়মতান্ত্রিক উড়াওড়ি ভুলে গিয়ে
ইতিহাস হয়ে আছে- ঝড়ো ইতিহাস।

আমাদের অস্থি বেচে খায়, খুঁটে খায় রাজর্শি
আমার কোটরগত সাহস
আমার কোটরগত সঙ্ঘবদ্ধতা
আমি হারিয়ে ফেলেছি;

আমাকে খুঁটে খায় রাজর্শি
আমি বুক পেতে দিই তার মুখে

আমার অস্থির মোহে
অন্ধকারে আকন্ঠ আছি ডুবে
অন্ধতায় সুখ ভেবে, মুক্তি মেনে

আজ, আমি যৌক্তিক ঘৃনাও চিনিনা।

 

২৮.১০.০৮

 

     
 

বৃত্তচ্ছেদ

 

কার্পেটে ধূলো জমে- ধূলোর বন্ধন;

অনুতপ্ত আমি
অপরাধী, ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে
নতজানু হয়ে আছি- অমৃত বিষ লাগে
মানুষ জেনে গ্যাছে
পরস্ত্রীর আলিঙ্গন ভীষন গভীর

বন্ধনে সুখ নেই
কিম্বা সুখের ইচ্ছা নেই
ধূলোর মতো কার্পেটে জড়াবো না
কখনও না-
সব বন্ধন অসহ্য লাগে
অসহ্য

সহ্য করবো কেন?

২৪.০৭.০৮

 
     

কেউ শুনুক আর না শুনুক

১.
আমার সমস্ত পদ্যে তুমি
এমনকি আমার যে অল্পবিস্তর গদ্য আয়োজন
সেখানেও তুমিই জাগ্রত হও
২.
এই রকম, এভাবে ভালোবাসা যায়
সংসার মিছে, সংসার মিছে...
তুমি আমাকে কালোত্তীর্ণ প্রেমে ভাসাও;
৩.
আমাকে তুমি যা দিলে
তার কিছুই ফেরত পাবে না
যা দাওনি তাই আমি তোমাকে
দেবো; যেমন, দুঃখ!
৪.
স্বপ্নে ছিলে
সামর্থে ছিলে না।
৫.
অসম প্রেম
সুষম দুঃখ
৬.
দুপুরে একলা বসে থাকা মানুষ ভাবে
বিকেলের কাছে বড় ঋণ আছে;
৭.
যাকে মনে পড়ে
তাকে ভুলতেই
আবার মনে পড়ে;
৮.
তুমি বোল্লেই খুনি হতে পারি
তুমি বোল্লেই প্রেমিক হতে পারি
শুধু তুমি বলো, পৃথিবীর সবকটি বাগানে
একযোগে ফোঁটাবো গোলাপ;

তুমি বোল্লেই আবার সমস্ত গোলাপে কীট হয়ে জন্মাতে পারি।
৯.
নিছক প্রেম নয়
কামাজীর্ণ আলিঙ্গনও নয়
তোমাকে লক্ষ্য করে
আমার চুম্বন
ওষ্ঠের সুষমা ছুঁতে নয় কেবল;
মানুষ থেকে মানুষের দিকে
প্রজন্মের প্রয়োজনে এ সঙ্গম
১০.
তুমি ভাবো ভালোবাসা উৎসব
আমি দেখি ভালোবাসায় উৎকন্ঠা
১১.
আমরা আমাদের কথা বলে যাবো
কেউ শুনুক আর না শুনুক

১২.০৮.০৮

 

 

অর্কেষ্ট্রা

 

ক.
পৃথিবীর দুরহতম আকাঙ্খার কাছে এইভাবে নিমজ্জিত হয়ে থাকে
আদিম কল্পণার অনুপ্রাস; হে সময়, হে অনুচ্চারিত প্রেম,
কোথায় গিয়েছে চলে আমাদের জানু আর জঙ্ঘার বিবিধ উচ্চারণ?
তরল জ্যোৎস্নার মতো বিষাদের কাছে (নিয়তির কাছে?)
ক্লান্ত মানুষের বোধের পরাজয় ঘটে। রাত আর অন্ধকার
এরকম ভাবে টিকে থাকে মস্তিস্কের কোষে কোষে;


খ.


ভুল বিন্যাসে লিখিত পংক্তিমালার সঙগে সহবাসের আকাঙ্খা
জাগিয়ে রাখেন নব্য কবি; বিস্তার করে চলেন শিল্পকলাহীন কবিতার স্তুপ
তিরিশি পঞ্চক আবার আসবেন কি আমাদের এই হিনমন্য
কবিতার উপত্যকায়? বুদ্ধদেব কি সুধীন্দ্রনাথ- উঠপাখি, জল দাও আমার শিকড়ে...
মাঝে মাঝে জীবনানন্দের কাছে কিছু ঋণ জমে আধুনিক
ছন্দের মাঝির বৈঠায়; আর সুধীন্দ্রনাথ? আজও চলছে পৃথিবী জুড়ে
নির্বোধেরই ভ্রান্ত দুঃস্বপ্ন;


গ.


ঈষানে ঈর্ষার বিষাণ আমাকে নিয়ে গ্যাছে অনেক দূরে; দূরতম শব্দের কাছে, পঙক্তির একেবারে শেষ সীমান্তে; অনিচ্ছার মেঘ যেখানে সমস্ত সকাল ভেসে চলে শুণ্যতার আবরণে; লহমায় ওড়ে বিষাদের তুলো যত্রতত্র; আমাকে নিয়ে যাবে তুমি? তুমি চরাচর আমার করেছ আলোকময়; তোমার যৌবনের কাছে বাধিত আমার প্রেম; বহুগামীতার ছদ্মবেশ আমার পুরুষময়। এ নদী থেকে ছুটেছি ও নদীর জলে অবগাহনে, সন্তরণে...। তুমি, তোমার ঈষানে ওড়ে ঈর্ষার নিশান; তোমার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় ছুড়েছে হাতছানি?


ঘ.


মনে পড়ে, সবুজ অর্কেষ্ট্রার বাতাবরণে চিরকালীন কবিতার দুঃখকে ঢেকে রাখার সেই সময়? ছদ্মবেশী অনুরাগের কাছে জীবনের গূঢ়তর অধ্যায়ের পঠন লিখন; কারাগারের জমাট বাতাসের মতোন ঘিরে আস তুমি; আধুনালুপ্ত সময়ের তুমি কি শীতল স্পর্শ?
তুমি কি প্রেম? কাম? সহবাস? দেবী? অনাঘ্রাতা? কবিতা? বেশ্যা? দয়মন্তী?

 

০১.০৯.০৮

 

     
 

আমার নৈঃশব্দ্য

 

আমার নৈঃশব্দ্য প্রগতীর পথ ধরে কিছুকাল হেঁটেছে একা একা
পার্কে উদ্যানে রমনীর কোমল কার্পেটে
সাম্যবাদের ধূলো ওড়ানো টগবগে মিছিলে; সব প্রপাতের
গন্তেব্যে সমুদ্রের অভিমুখ। আত্মকেন্দ্রীক সময়ের
আবহমানতার আগ্রাসনে শ্রেনীচ্যুত শ্রেনীসঙগ্রাম; আমার নৈঃশব্দ্য
আশাহত হয়ে পরিত্যগ করেছে উত্থিত শ্লোগাণের
বদ্ধমুষ্ঠির সীমানা; শান্তনা আছে মনে করে
হেমন্তের রৌদ্রের মতো অষ্টাদশীর গভীরে খুঁজেছে বেঁচে থাকার মানে
প্রতিদিন একটি ফুলের নামে নাম দিয়েছে এক একটি সকালের
আমার নৈঃশব্দ্য, হায়!
হেমন্ত গিয়েছে চলে; আসেনি বসন্ত
নিদারুন শ্রাবণের ধারায় ধারায় সে এখন ভিজে চলে রাতদিন;

প্রগতীর পথে একা একা আমার নৈঃশব্দ্য তুমি
নিযুত তারকাপুঞ্জের স্থিতিময় কাঠামো হয়ে আরো কিছু কাল
যদি হেঁটে যেতে

০১.০১.০৮

 
     
     

মতান্তরে শিখে যাই মৃত্যুর গান

১.
(হাঁড়ে মজ্জায় আমাদের নন্দিত কাবিননামা; সোনালী হোক আর রূপালীই হোক কাবিনের ইতিহাস আঁধারে মন্থর) সভ্যতা যেদিন লিপিবদ্ধ হতে লাগলো সত্যের সাথে মিথ্যার অজেয় ঠাঁই মিললো। পক্ষপাতের ইতিহাসে পুস্তকগুলি সব নিয়ত ভারাক্রান্ত হল- উঁইপোকার অন্তজ এইসব লিখিত দলিল।

হাঁড়ে মজ্জায় আমাদের মিথ্যার নয়টি মোকাম। অর্ধেক মৃত্যু দিয়ে, বাকি অর্ধেক রক্ত চোখে প্রতিষ্ঠার শিখরে। আর অবশিষ্ট আষ্টআনা অজ্ঞানতার কারাকক্ষে স্থবির দিন গোনে আলস্যে।
 


২.
আমাদের আনন্দের কোন গান নেই-
আমাদের মুখর কোন নৃত্য নেই-
আমাদের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের কোন দর্প নেই-
আমাদের চোখে কোন স্বচ্চ আলো নেই-
আমাদের বেঁচে থাকায় কোন আস্থা নেই-

নেই-নেই-নেই- মৃত্যুময় আঁধারে
(মৃত্যুসিক্ত ভৃত্যেরা গান ধরে)
মৃত্যু ছাড়া আমাদের আর কোন উৎসব নেই;

 

 

০৮.১০.০৮