মার্ক টোয়েন (Mark Twain)

ধারাবাহিক (পর্ব ১১-২০)

-তিমুর

timursblog@yahoo.com

© সংরক্ষিত

 পর্ব (১-১০)

 পর্ব (২১-৩০)

পর্ব (৩১-৪২ শেষ)

 

 

পর্ব

বছর খানেক পর স্যাক্রামেন্টো ইউনিয়ন পত্রিকা থেকে একটা এসাইনমেন্ট পেলেন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ওপর লেখার মার্চের মাঝামাঝি সময় হাওয়াই পৌঁছুলেন টোয়েন ঘোড়ায় চড়ে সারা হাওয়াই চষে বেড়িয়েছেন তিনি পর্যটক নয় অভিযাত্রীর চোখ দিয়েই হাওয়াইকে দেখার চেষ্টা করেছেন মার্ক টোয়েন

স্যাক্রামেন্টো ইউনিয়নে ছাপা প্রবন্ধগুলি দারুণ সাড়া ফেলেছিলো , চারমাস পরে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে দেখলেন, তিনি পশ্চিম উপকুলের সবচেয়ে বিখ্যাত লোক বনে গেছেন তবে খ্যাতি তো আর ধুয়ে খাওয়া যায়না, কাজ শেষ, চাকুরী নেই

থিয়েটার মালিক মিঃ ম্যাকগায়ার পরামর্শ দিলেন "এইতো সময়, লেগে যান বক্তৃতা দিতে" ২রা অক্টোবর ১৮৬৬ সালে একাডেমি অভ মিউজিক এর হল ভাড়া নিলেন টোয়েন, প্রবেশমুল্য একডলারে লেকচার দেবেন হাওয়াই দ্বীপুঞ্জ সম্বন্ধে, বিজ্ঞাপনে লিখলেন Doors open at 7 o'clock. The trouble to begin at 8 o'clock (!?!),

আসলেই বিপদে পড়লেন মার্ক টোয়েন, জীবনে প্রথম এতো লোকের সামনে কথা বলতে গিয়ে, কিন্তু সেটা ছিলো মঞ্চভীতির সাথে মার্ক টোয়েনের প্রথম ও শেষ পরিচয় এরপরে হাজার হাজার বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি লাখ লাখ মানুষের সামনে, পরের চারদশক তিনিই হবেন আমেরিকার বক্তৃতামঞ্চের প্রধানতম আকর্ষণ

তাঁর অনেকগুলো পেশার মধ্যে আরেকটা যোগ হলো, বক্তৃতা দেয়া ডিসেম্বরের পনেরো তারিখে পানামা অন্তরীপ পেরিয়ে নিউ ইয়র্কে এলেন মার্ক টোয়েন এতোকাল কেবল পশ্চিম অঞ্চলের লোকই তাঁর নাম জানতো এবার দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রভূমি পূব অঞ্চলও তাঁর নাম জানলো

নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় মিলনায়তন কুপার ইউনয়ন হলে লেকচারের আয়োজন করলেন ইউটার সাবেক গভর্নর ফ্র্যাংক ফুলার রোজগার হলগ তিনশো ডলার, হল ভাড়া দিতেই চলে গেলো প্রায় সবটা , কিন্তু আসর হলো জমজমাট !

এরপরে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ছাপা 'আল্টা ক্যালিফোর্নিয়া ' থেকে নতুন এসাইনমেন্ট, ভুমধ্যসাগর আর প্যালেস্টাইন যাবে জাহাজ 'কোয়েকার সিটি' টোয়েনকে কোয়েকার সিটির যাত্রী হিসেবে এ যাত্রার ধারাবাহিক বর্ণনা লিখবেন চিঠি আকারে ইনোসেন্ট এব্রড নামে চুক্তি হলো বারোশো ডলার জাহাজভাড়া আর প্রতিটি চিঠি বাবদ বিশ ডলার পাবেন নিউইয়র্ক ট্রিবিউন ও কিছু লেখা কিনবে বলে কথা হলো

ওদিকে চার্লস হেনরি ওয়েব ক্যালিফোর্নিয়ার পাট চুকিয়ে পুবে চলে এসেছেন, এখানে এসে তিনি টোয়েনের জাম্পিং ফ্রগ সহ দ্য ক্যালিফোর্নিয়ানে ছাপা অনেকগুলো পুরনো স্কেচ বই আকারে ছেপে ফেললেন

নাম হলো গল্পের 'দ্য সেলিব্রেটেড জাম্পিং ফ্রগ এন্ড আদার স্টোরিজ' সবুজ কাপড়ে বাঁধানো সোনালী জরির হরফে নাম লেখা বইটার দিকে তাকিয়ে মার্ক টোয়েনের বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো যে তিনি এখন একজন লেখক

বন্ধু ব্রেট হার্ট কে লিখলেন,

The book is out and is handsome. It is full of . . . errors....but be a friend and say nothing about those things. When my hurry is over, I will send you a copy to poison the children with.

 

পর্ব-১২

 

কোয়েকার সিটি জাহাজে তাঁর দেখা হয় ড্যান স্লোট, মিসেস ফেয়ারব্যাংকস, জ্যাক ভান নোস্ট্রান্ড আর চার্লস "চার্লি" ল্যাংডনের সাথে চার্লির বাবা নিউ ইয়র্ক স্টেটের, এলমিরা শহরের ধনী কয়লা ব্যাবসায়ী জারভিস ল্যাংডন জাহাজ যখন স্মার্না বন্দরে থেমেছিলো তখন আঠারো বছর বয়সী চার্লস তার বোন অলিভিয়া "লিভি" ল্যাংডনের একটা ছবি দেখালো মার্ক টোয়েন কে

দেখামাত্রই ছবিটার প্রেমে পড়ে পড়ে গেলেন স্যাম মনে মনে ঠিক করলেন টোয়েন আমেরিকা ফিরেই রক্ত মাংসের মানুষটাকে দেখতে হবে কিন্তু দেশে ফিরে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে পড়ে গেলেন

হার্টফোর্ডের আমেরিকান পাবলিশিং কোম্পানির কর্ণধার এলিশা জে বিলস প্রস্তাব দিলেন ইনোসেন্ট এব্রডের চিঠিগুলো বই আকারে প্রকাশ করার, তা করতে হলে মেলা সম্পাদনা, অনুলিখন আর প্রুফ দেখার কাজ করার আছে আর এই ইনোসেন্ট এব্রড বইটাই হবে মার্ক টোয়েনের প্রথম বেস্ট সেলার, আর অর্থ ও যশের ভিত্তি

বি্লস তাকে দুটো বিকল্প দিয়েছিলেন দশ হাজার নগদে সব স্বত্ব ছেড়ে দেবেন অথবা যা বিক্রি হবে তাঁর বিশভাগ রয়াল্টি, দোনোমোনো করে রয়াল্টি নিতে রাজি হলেন, "টাকা পয়সারর ব্যাপারে আমার সেরা সিদ্ধান্ত" নিঃসন্দেহে! আড়াই লক্ষ ডলার রোজগার করে ছিলেন তিনি ইনোসেন্ট এব্রডের রয়াল্টি থেকে

নিউ ইয়র্কে বেড়াতে গিয়ে কোয়েকার সিটি জাহাজের পুরনো সংগীদের সাথে দেখা চার্লি ল্যাংডন জানালো ক্রিসমাসটা তাঁরা নিউ ইয়র্কের সেইন্ট নিকোলাস হোটেলে কাটান, স্যাম ক্লিমেন্সকে অতিথি হিসেবে পেলে ল্যাংডন পরিবার সন্মানিত বোধ করবে দশলাখ ডলার ব্যয় তৈরি ব্রডওয়ের হোটেলে ছিল সেন্ট্রাল হিটিং আর গ্যাসবাতির ব্যবস্থা, সেযুগের তুলনায় অত্যাধুনিক বন্দোবস্ত

আঠারোশো আটষট্টি সালের বড়দিনে চার্লস ডিকেন্স এলেন নিউ ইয়র্কে স্টেইনওয়ে হলে তিনি তাঁর লেখা ডেভিড কপারফিল্ডের অংশ পড়ে শোনেলেন, কালো একটা মখমলের কোট পড়েছিলেন ডিকেন্স, বাটহোলে গোঁজা ছিলো একটা লাল গোলাপ

কিন্তু ডিকেন্সকে দেখবেন কি, মার্ক টোয়েনের চোখ আটকে ছিলো লিভি ল্যাংডনের ওপর সতেরো বছর বয়েসে স্কেটিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন তারপর এখন একটু একটু হাঁটতে পারেন লিভির বয়স তখন বাইশ, স্যামের বত্রিশ, একজন পূবের ধনাঢ্য পরিবারের সযত্নে লালিত দুহিতা অপর জন চালচুলোহীন কাঠখোট্টা পশ্চিমা, হালের উদীয়মান লেখক

দুজনের মধ্যে বয়স, সামাজিক অবস্থান, অর্থ ও পারিবারিক জীবন সবদিক থেকেই দুস্তর দূরত্ব, কিন্তু স্যামের দৃঢ় বিশ্বাস এতো দিনে তিনি তাঁর জীবনসংগীকে খুঁজে পেয়েছেন , যদিও লিভির সাথে ভালো করে এখনও একবার কথাই বলেননি তিনি ! সপ্তাহখানেক পর আরেকটা পার্টিতে আরেকবার লিভির সাথে দেখা হলো চার্লিকে বললেন তাদের এলমিরার বাড়িতে যাবার দাওয়াত তিনি খুশি হবেন

 

পর্ব-১৩

কিন্তু ল্যাংডনদের এলমিরার বাড়িতে যেতে টোয়েনকে আরো বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হলো গৃহযুদ্ধে বিজয়ী ইউনিয়ন পক্ষের সর্বাধিনায়ক (সেই কর্নেল গ্র্যান্ট, যাঁর সাথে মোকাবেলা হয়েছিলো ম্যারিয়ন রেঞ্জার্সের মিসৌরির বনে ) জেনারেল গ্র্যান্ট, তখনও প্রেসিডেন্ট হননি ওয়াশিংটনে আছেন

সাক্ষাতকার নিতে গেলেন টোয়েন, কিন্তু জেনারেলের চৌকো, নির্লিপ্ত মুখের দিকের দিকে জীবনে প্রথমবারের মতো ভাষা হারিয়ে ফেললেন মার্ক টোয়েন, গ্র্যান্টও কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলেন কেশে গলা পরিষ্কার করলেন মার্ক টোয়েন "জেনারেল আমি বেশ বিব্রত বোধ করছি, আপনিও কি সেরকম কিছু বোধ করছেন ?"

অট্টহাসির সাথে ইউলিসিস গ্র্যান্ট বললেন, না সেরকম কিছু বোধ করছেননা তিনি, সাক্ষাতকারের বাকিটা চমৎকার উৎরে গেলো তারপরে দেখলেন আল্টা ক্যালিফোর্নিয়া তাঁর প্রবন্ধের কপিরাইট আটকে রেখেছে, সেজন্য সান ফ্রানসিস্কোতে গেলেন দেন দরবার করতে আরেকটা বক্তৃতার দাওয়াত পেলেন তিনি ভূমধ্যসাগর এলাকা ভ্রমনের ওপর , ষোলোশো ডলার রোজগার হলো তাতে

এলমিরার বাড়িতে পয়লাবার গিয়ে মার্ক টোয়েন দমে গেলেন ঘোড়ার গাড়িতে বাগানের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ভাবলেন, এতো ফুল কি কাজে লাগে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ছাড়া ? সবকটা ঘরে পুরু পর্দা ঝুলছে দিনে আলো ঢোকে কিভাবে সেসব ঘরে?

লিভির মা মার্ক টোয়েনের হবু শাশুড়ী  মিসেস ল্যাংডন গোঁড়া প্রেসবাইটেরিয়ান, গীর্জা আর ধর্মকর্ম ছাড়া মুখে আর কোন কথা নেই লিভির বাবা কয়লা ব্যবসায়ী জারভিস ল্যাংডনকে ঘোর দুনিয়াদার মানুষ বলে মনে হলো

(পরে তিনি বুঝেছিলেন বাড়িটা আসলে অতো নিস্প্রাণ নয়, একটা পিয়ানো আছে বৈঠকখানায়, সেটাকে ঘিরে সবাই গান করে, কৃষ্ণাংগ বক্তা ফ্রেডারিক ডগলাসের মতো আনেক উদারপন্থী লোক এ বাড়ির আতিথ্য গ্রহন করেছেন, আর জারভিস ল্যাংডনের কঠিন খোলসের মধ্যে একটা প্রানখোলা হাসিখুশি মানুষ লুকিয়ে আছে )

লিভিকে একফাঁকে সাহস করে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই তিনি খুব কঠোরভাবে না করে দিলেন স্যাম ক্লিমেন্স/মার্ক টোয়েন কে তিনি শ্রদ্ধা করেন, এবং আজীবন তাই করে যাবেন , কিন্তু তাই বলে তাঁকে বিয়ে করা ? অসম্ভব ব্যাপার !!

 

পর্ব-১৪

মার্ক টোয়েন চলে এলেন কিন্তু দমলেন না নায়াগ্রার প্রপাতের মতো প্রেমপত্র ছাড়তে লাগলেন (লিভির প্রতি দুশো চুরাশিটা চিঠি ছেড়েছিলেন তিনি সর্বমোট) এতে তাঁকে ঘষে মেজে ল্যাংডন বাড়ির জামাই হবার মতো যোগ্য করতে লিভির প্রতি অনুরোধ করেন

 

লিভির মন গলানোর জন্য আত্মত্যাগের পরাকাষ্ঠা স্বরূপ প্রতিজ্ঞা করেন, এখন থেকে তিনি রোজ গীর্জায় যাবেন, অসংযত ভাষাটা সামলাবেন, দিনের তিরিশটা চুরুট পাঁচটায় নামিয়ে আনবেন এতে তাঁর প্রান যায় যাক (একটাও কার্যত করেননি তিনি!)

শেষের কয়েকটা চিঠিতে লিভি বেশ নরম হয়েছেন ভেবে ছুটে গেলেন এলমিরায় কিন্তু এবারে খুবই শীতল অভ্যর্থনা পেলেন সবার কাছ থেকে, পিয়ানোর সাথে তাঁর গানের গলা শুনে কেউ প্রশংসা করলোনা, তাঁর চুটকি শুনে হাসলো না, লিভিকে আরেকবার প্রস্তাব দিতেই তিনিও বলে বসলেন "না"

মার্ক টোয়েন ভাবলেন সোনার খনিতে কাজ করার পর এতো বেশি পরিশ্রমে এতো কম লাভ সম্ভবত আর কখনো বরাতে জোটেনি, সন্ধ্যার ট্রেনেই তিনি চলে যাবেন ভাবলেন

পরিবারের সবার সাথে বিদায় নিয়ে চার্লির সাথে ঘোড়ারগাড়িতে চড়ে বসলেন টোয়েন কোচোয়ান চাবুক কষালো ঘোড়ার পিঠে গাড়িটা ছুটে গেলো সামনে আর আলগা আসনে বসে থাকা চার্লি আর স্যাম পড়ে গেলেন পিছনের দিকে একটা খোয়া আর বালি ভর্তি গর্তে !

বাড়িশুদ্ধ লোক ছুটে এলো এমন জখম নিয়ে অতিথিকে ট্রেনে তুলে দেবার প্রশ্নই ওঠেনা, ধরাধরি করে বৈঠকখানায় নিয়ে আসা হলো টোয়েনকে, সবাই যখন ডাক্তারের খোঁজে ব্যস্ত, লিভি তখন মার্ক টোয়েনের মাথাটা মালিশ করতে লাগলেন দুসপ্তাহ রইলেন তিনি ল্যাংডন বাড়িতে

এই ফাঁকে লিভির মন গলাতে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন, লিভি বললেন বিয়ে ব্যাপারটা তাঁর বাবার মতের ওপর নির্ভর করে আসলে ব্যাপার হচ্ছে ল্যাংডন পরিবারের সবাই মার্ক টোয়েনকে পছন্দ করতেন, তাঁর কাছে আসতে পারাটা সৌভাগ্য মনে করতেন

কিন্তু তাঁদের আদুরে কন্যার বর হিসেবে তিনি তাঁদের কাছে মোটেই উপযুক্ত ছিলেননা "নট গুড হাজব্যান্ড ম্যাটেরিয়াল" (!), মার্ক টোয়েন সম্বন্ধে লিভির মায়ের বিখ্যাত উক্তি

তবে এই দুর্ঘটনায় শাপে বর হলো, বরফ অনেকটাই গললো ল্যাংডন দম্পতি ও তাঁদের হবু জামাতার মধ্যে

 

পর্ব-১৫

একদিন জারভিস ল্যাংডন, স্যামকে ডেকে এমন পাঁচজন লোকের নাম বলতে বললেন যাঁরা স্যামকে সুদুর পশ্চিম অঞ্চলে চিনতেন এরা সব খনিমজুর টাইপের হলেই ভালো হয় (জারভিস ল্যাংডনের ধারনা ছিলো, স্যাম ওরকম জীবনই পশ্চিমে কাটিয়েছেন)এব্যাপারে স্যাম কোন কারচুপি করলেননা

ইচ্ছা করলে তিনি স্টিভ গিলিসের মতো অতি উৎসাহী বন্ধুদের নাম করতে পারতেন, কিন্তু তা না করে তিনি পাঁচজন নিরপেক্ষ লোকের নাম করলেন, এদের মধ্যে দুজন পাদ্রিও ছিলেন এদেরকে চিঠি দিলেন ল্যাংডন, চিঠিগুলোর উত্তর পাওয়ার পর স্যামকে ডেকে পাঠালেন স্টাডিতে

চিঠিতে তাঁরা সকলেই স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স/মার্ক টোয়েন কে চমতকার মানুষ হিসেবেই জানেন, কিন্তু তাঁর কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়ার ঝুঁকি নেয়া যেতে পারে এমন মত তাঁরা দেবেননা

চিঠিগুলো পড়ার পর মি. ল্যাংডন চুপ করে রইলেন, মার্ক টোয়েনও কি বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেননা, জারভিস ল্যাংডন জিগ্যেস করলেন সরাসরি "কি রকম লোক এরা? পৃথিবীতে তোমার কোন বন্ধু নেই নাকি?" "নেই বলেইতো মনে হচ্ছে" বললেন টোয়েন

"তা হলে আমিই হবো তোমার বন্ধু., মেয়েটিকে তোমাকে দিলাম, এদের চেয়ে অনেক বেশি চিনি আমি তোমাকে"

১৮৬৯ সালে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বিয়ের কথা পাকা হলো, তবু একবছর অপেক্ষা করতে হলো একটা নিয়মিত আয়ের আশায় বাফেলো এক্সপ্রেস দৈনিকের শেয়ার কিনলেন মার্কটোয়েনবিয়েটা হয়েছিলো ২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৭০ সালে এলমিরায়

দাওয়াত ছিলো একশো উপর বেশি লোকের অসুস্থতার কারনে মার্ক টোয়েনের মা জেইন ক্লিমেন্স আসতে পারেনি কিন্তু বড়বোন পামেলা আর ভাগ্নী এন মোফেট এসেছিলেন

বিয়ের পরদিন বিকেলে নিউ ইয়র্ক থেকে ট্রেনে বাফেলোতে এসে নামলেন, একসার স্লেজ দাঁড়িয়ে ছিলো মার্ক টোয়েন তাঁর পরিচিত মিঃ স্লি কে একটা বোর্ডিং হাউজ ভাড়া করতে বলেছিলেন, বিবাহিত জীবনটা শাদামাটা ভাবেই শুরু করতে চান

কিন্তু স্লেজগুলো বাফেলোর সবচেয়ে অভিজাত রাস্তা ডেলাওয়ার অ্যাভিনিউ ধরে চলতে লাগলো দেখে বেশ অবাক হলেন, স্লেজ চালক কি পথ ভুল করছে? লিভি ব্যাপারটা জানতেন কিন্তু মুখ খুললেন না অবশেষে স্লেজটা এসে থামলো সুন্দর একটা দোতলা বাড়ির সামনে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন তাঁরা, জারভিস ল্যাংডন একটা ছোট্ট বাক্স, ওর মধ্যে এ বাড়ির দলিল, স্যাম আর লিভির বিয়েতে তাঁর উপহার

 

 

পর্ব-১৬

কয়েকদিন পর স্যাম পুরোনো বন্ধু জিমি গিলিসকে লিখলেন চিঠিতে,

"Oh I am a lucky man! I have everything that a person can ask for, a beautiful & gifted wife, a marvelous home, a great job. But from now I am going to do what I had always wanted to do, that is to test the ultimate range of this amazing tongue, the English Language...."

হ্যানিবাল শহরের সেই উদ্দেশ্যহীন, অনাথ, ভবঘুরে কিশোর ! অনেক ঘাটের পানি খেয়ে, অনেক অভিযান শেষে তিনি এসেছেন এই বাফেলো শহরে এর পরের পনেরো বছরে তিনি যা লিখবেন, প্রায় অবধারিতভাবে তাই হবে ক্লাসিক (রাফিং ইট, দ্য গিলডেড এজ, এডভেঞ্চার অভ টম সয়্যার, এডভেঞ্চার অভ হাকলবেরি ফিন, প্রিন্স এন্ড দ্য পপার, লাইফ অন দ্য মিসিসিপি ) প্রায় পঞ্চান্ন বছর পর বিশের দশকে গারট্রুড স্টেইন/আর্নেস্ট হেমিংওয়ে/এফ স্কট ফিটজেরাল্ড বা প্যারিসবাসি "লস্ট জেনারেশন" লেখকদের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত ইংরেজভাষী লেখকই প্রভাবিত হবেন মার্ক টোয়েনের লেখনী বলয়তে

প্রচলিত সমাজের প্রতি প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ, দুর্বলের প্রতি সহানুভূতি আর তীক্ষ্ণ বাস্তববোধ টোয়েনের লেখার প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য, যেটা উনিশ শতকের অন্যান্য লেখকদের থেকে তাঁকে আলাদা করে রেখেছে যদিও ভাঁড়ামির মাত্রা টোয়েনের অনেক লেখায় সীমা ছাড়িয়ে গেছে রেসিজমের অপবাদ অনেক ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া সম্ভব সত্যিকার অর্থেই মার্ক টোয়েন প্রথম আমেরিকান মৌলিক লেখক মানে টেকনিকের ব্যাপারে মৌলিক, জেমস ফেনিমমোর কুপার, নাথানিয়েল হথর্ন আর হারমান মেলভিল হয়তো টোয়েনের আগে আমেরিকান সাহিত্যে পদচারনা করেছেন, কিন্তু কৌশল তাঁরা ধার করেছিলেন ইউরোপের কাছ থেকে

মার্ক টোয়েন আক্ষরিক অর্থেই ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে মানে , থ্যাকারে, পো, ডিকেন্সদের গথিক, সেন্টিমেন্টাল, রোমান্টিক ধারা থেকে ইংরেজি ভাষাকে বিশ শতাব্দীর আধুনিক সংশয়বাদী ও পরীক্ষনবাদী ধারায় নিয়ে এসেছেন আর মার্ক টোয়েনের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে আড়ষ্ট বিশুদ্ধ বইয়ের ভাষায় আটকে না থেকে তিনি সাধরন মানুষের মুখের ভাষা ব্যাবহার করেছেন যতদূর সম্ভব যে জন্যই এতো জীবন্ত মনে হয় টম স্য়্যার আর হাকলবেরি ফিনকে

তবে বেশী দিন ডেলাওয়ার এভিনিউতে থাকতে পারেন নি মার্ক টোয়েন তাঁর শ্বশুর, জার্ভিস ল্যাংডন অসুস্থ হয়ে পড়েন তার কিছুদিন পরে পরলোক গমন করেন মার্ক টোয়েনের প্রথম সন্তান, ল্যাংডন ক্লিমেন্স জন্ম নিয়ে বেশি দিন বাঁচে নি

১৮৭২ সালে এলমিরার কাছে পাহাড়ের উপর কোয়ারি ফার্ম কেনেন মার্ক টোয়েন বাফেলোতে আর ফিরে যাবেন না ঠিক করে বাফেলোর বাড়িটা বেচে দেয়া হয় জায়গাটা ছিল লিভির বোনের সম্পত্তি ওখানে বসেই মার্ক টোয়েন 'রাফিং ইট' বইটার তৈরি করতে শুরু করেন খসড়াটা দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন এমন সময় বেড়াতে এলেন তাঁর বন্ধু জো গুডম্যান গুডম্যানকে পান্ডুলিপিটা পড়তে দিলেন তিনি

গুডম্যান পড়ছেন তো পড়ছেনই, নার্ভাস হয়ে পায়চারী করতে লাগলেন ক্লিমেন্স পড়া শেষে গুডম্যান বলেন এ যাবৎ যা কিছু লিখেছেন তার মধ্যে এ বইটা সবচেয়ে সেরা তো বটেই, অসাধারনও বড়ভাই ওরাইওনের সাথে পশ্চিমে যাত্রার বর্ণনা দিয়ে শুরু করেছেন, শেষ হয়েছে হাওয়াইতে গিয়ে আত্বজীবনীরই একটা টুকরো অংশ, কিন্তু লিখেছেন এতো মসৃন ভাষায় তা উপন্যাসকে ছাড়িয়ে গেছে (কিছু কিছু অংশ যে অতিরঞ্জিত করেননি তা বলা যাবে না) খসড়াটা পড়ে জো গুডম্যান বললেন এ লেখাটা এযাবত লেখা মার্ক টৌয়েনের সেরা লেখা

স্যাম ক্লিমেন্স, পুরনো মনিব গুডম্যানকে বললেন তিনি যদি এখানে মানে কোয়ারি ফার্মে থেকে স্যামকে পান্ডুলিপি দেখতে সাহায্য করেন তাহলে তিনি জো'কে বেতন দেবেন! জো অবশ্য জানালেন মাইনে নেবার কোনো ইচ্ছে তাঁর নেই, তবে তিনি এমনিতেই কিছুদিন ক্লিমেন্স পরিবারের সাথে থাকতে পারেন

মে মাসে স্যাম, এলিশা বিলসকে চিঠি লিখে বললেন বারোশো পাতার মতো পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন তিনি এবং দিনে প্রায় ত্রিশ থেকে পঁয়ষট্টি পৃষ্ঠা করে লিখছেন বাফেলো এক্সপ্রেস পত্রিকার মালিকানা লোকসানে বেচে দেয়াতে দেনায় পড়তে হয়েছিল তাঁকে বক্তৃতা দিবে সেটা উশুল করার জন্য কোমর বেঁধে লেগে পড়লেন তিনি

সেই গ্রীস্মে ক্লিমেন্স পরিবার কানেক্টিকাটের হার্ট ফোর্ড শহরে ফরেস্ট স্ট্রিটের হুকার হাউজে উঠে এলেন বসবাসের জন্য হার্ট ফোর্ডে মার্ক টোয়েনের অনেকগুলো আকর্ষণ ছিল, এখানে তাঁর প্রকাশকরা থাকতেন, এবং বেশ কিছু নাম করা লেখকের ডেরা ছিল তখন হার্টফোর্ডে আরো ছিলেন বন্ধু রেভারেন্ড জো টুইচেল বাফেলোর বাড়িটা বেচে তল্পি-তল্পা গুটিয়ে হার্টফোর্ডে বসত গাড়লেন এই উদীয়মান লেখক

বইটা শেষ হবার পরে পুরোদমে বক্তৃতা দিতে লাগলেন বস্টন বাড়ির কাছে হওয়াতে সুবিধাই হলো, কারন বস্টন ছিল লেকচার সার্কিটের প্রধান প্রাণ কেন্দ্র উইলিয়াম ডিন হাওয়েলস, ব্রেট হার্ট (হার্ট তখন পূবে চলে এসেছেন) এদের সাথেও আড্ডা মারা যেত বস্টন গেলে

১৮৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'রাফিং ইটের' কপি এল প্রেস থেকে আপাততঃ লেকচার দেয়া থেকে অব্যাহতি পেয়ে খুশি হলেন তিনি ততোদিনে বাফেলোর দেনা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি আর 'রাফিং ইট' থেকে মোটা অংকের অগ্রীম পেয়েছেন

'রাফিং ইট' বইটা তার আগের ইনোসেন্ট এব্রডের মতই একেবারে আনকোরা ধাঁচে লেখা সীমান্তের জীবনের একেবারে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কাথা তুলে এনেছেন মার্ক টোয়েন দশ বছর আগে ভাই ওরাইওনের সাথে পশ্চিম যাত্রাই এ বইয়ের পটভূমি সম্পূর্ণ আত্ম জীবনীমুলক উপন্যাস তবে যে ধাঁচের হিউমার তিনি ব্যাবহার করেছেন সেটা কারো কারো কাছে একটু বাড়া বাড়ি মনে হতে পারে

১৮৭২ সালটা মার্ক টোয়েনের জন্য একটা ঘটনাবহুল বছর এ বছর তাঁর শিশুপুত্র ল্যাংডন ক্লিমেন্স মারা গেল এবং সুজি ক্লিমেন্স নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলো এবং সে বছরই তিনি ইংল্যান্ডে যাত্রা করলেন

 

পর্ব-১৭

প্রথম দর্শনেই ইংল্যান্ডের প্রেমে পড়ে গেলেন তিনি এযাবত তিনি যত দেশ ভ্রমন করেছেন সেগুলোর উপর কিছূটা ব্যাঙ্গ করে ভ্রমন কাহিনী লিখেছেন তিনি কিন্তু বিলাত দেশটি এর ব্যাতিক্রম তবে "প্রিন্স এন্ড দ্য পপার," "এ কানেক্টিকাট ইয়াংকি ইন কিং আর্থার্স কোর্ট" এ সব বাইয়ের মালমশলা তিনি সংগ্রহ করেছেন তখন ইউরোপে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে তিনি আরো অনেকবার ভ্রমন করবেন

তবে ইংল্যান্ডের উপর কোনো কৌতুককর বই না লিখলেও একটা উপন্যাস তিনি লিখেছেন হার্টফোর্ডের প্রতিবেশী চার্লস ডাডলি ওয়ার্নারের সাথে সেই শীতে লেখেন "দ্য গিল্ডেড এজ" বইয়ের মুল নায়ক তাঁর মা জেইনের চাচাতো ভাই জেমস ল্যাম্পটন

দু'মাসের মধ্যে বইটা দাঁড়িয়ে গেল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার টেনেসি রাজ্যেকে পটভুমি করা হয়েছে চরিত্রগুলো সবই ঐতিহাসিক বইটা পরের বছর ১৮৭৩ এ ছাপা হলো ভালই কাটতি হয়েছিল সেটার

হার্টফোর্ডেই ডেরা গাড়বেন ভাবলেন মার্ক টোয়েন ফার্মিংটন এভিনিউতে জমি কিনে বাড়ি বানালেন তিনি পরের বছর বসন্তে যখন বাড়িটা তৈরি হচ্ছে লিভি আর একবছরের সুজিকে নিয়ে আরেকবার ইংল্যান্ড বেড়াতে গেলেন মার্ক টোয়েন

আগের বার অনেক খাতির পেয়েছিলেন টোয়েন এবারে প্রায় রাজার সন্মান পেলেন লুইস ক্যারল, উইল্কি কলিন্স এরা এলেন দেখা করতে কিন্তু লিভি ক্লিমেন্স অসুস্থ হয়ে পড়তে শরতকালে লন্ডন ছেড়ে এডিনবরায় ভেইচ হোটেলে উঠলেন মার্ক টোয়েন সেই বছরই ১৩ ই অক্টোবর লন্ডনের হ্যানোভার স্কয়ারে বক্তৃতা দিলে টোয়েন, বিষয় স্যান্ডউইচ আইল্যান্ড (হাওয়াই) ভ্রমন আসর হলো জমজমাট নিজের দেশেও এতো খাতির পাননি তিনি অনেকগুলো বক্তৃতা দিয়েছিলন তিনি চার্লস ডিকেন্সের ম্যানেজার জর্জ ডলবি থিয়েটার ভাড়ার দায়িত্বে ছিলেন

১৮৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকা ফিরলেন মার্ক টোয়েন বিদেশের খ্যাতিতে দেশেও ভাবমুর্তি অনেক উজ্বল হয়েছে দেকা গেল এবং সে বছরই গ্রীস্ম কালে, কোয়ারি ফার্মে, মার্ক টোয়েন তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফিকশন "এডডভেঞ্চার্স অভ টম সয়্যার" এর খসড়া লিখতে শুরু করলেন

আসলে হ্যানিবালের ছোটবেলার স্মৃতি টেনে এনে সেটাকে উপন্যাসের চেহারা দিয়েছেন তিনি একে তিনি বইটা লিখেছেন কোয়ারি ফার্মের স্টাডিতে বসে স্টাডিটা সত্যি একটা আজব জায়গা ছিল অষ্টভুজ আকৃতির একটা ঘর, দেখতে ঠিক একটা স্টিমারের পাইলট ঘরের মত এখানে বসে প্রায় তিরিশ বছর আগের এক মফস্বল শহরের কিছু খালি পা, দুষ্ট বালকের কীর্তিকলাপের স্মৃতিচারণ, ব্যাস

 

পর্ব-১৮

      

 

পর্ব-১৯

আসলে মিসিসিপি নদীর মাঝাখানে জ্যাকসন্স আইল্যান্ড সত্যিই আছে, সত্যি ওখানে একটা বাদুরভর্তি গুহা ছিল স্যামের ছোটবেলায় মার্ক টোয়েনের ছোটবেলায় দ্বীপটার মালিক ই. ডি. ম্যাকডোয়েল নামে একজন একটু পাগলাটে ডাক্তার সেইন্ট লুইতে একটা মেডিক্যাল কলেজ চালাতেন ড. ম্যাকডোয়েল ছোটবেলায় সত্যিই বন্ধুদের সাথে গিয়ে ওই দ্বীপে বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দিবে থাকতেন স্যাম আর তার বন্ধুরা এতো লম্বা সময় লুকিয়ে থাকত ছেলেরা যে বাড়ির লোকেরা ভাবতো বুঝি নদীতে ডুবে মরেছে পাজীগুলো

 

সে যাহোক, টম সয়্যার বইটা একটু বিশ্লেষন করলেই দেখা যাবে নিজের আর বন্ধুদের কথাই বলেছেন মার্ক টোয়েন ভুমিকাতে তিনি নিজেই লিখেছেন, "এই বইটা মুলতঃ, আমার আর আমার চেনা কয়েকজন ছেলের বালকবেলার কিছু স্মৃতির সমাহার, শুধু নামগুলো পাল্টে দেয়া হয়েছে ।"

আর বইটার উৎসর্গ পত্রে মার্ক টোয়েন নিজেই লিখেছেন,

"Most of the adventures recorded in this really occured, one or two were experiences of my own, rest those of boys who were schoolmates of mine. The Huck Finn is drawn from life;Tom Sawyer also, but not from an individual---he is combination of characteristics three boys whom I know, therefore belongs to the composite architecture of things.

এখন দেখা যাক আসলে কে কী!

টম হচ্ছে স্যাম ক্লিমেন্স কোনো সন্দেহ নেই, তবে আরো কিছু চরিত্রের ছায়া পড়েছে এতে সিড হচ্ছে স্যামের ছোটভাই হেনরি ক্লিমেন্স (হেনরি একটা দুঃখজনক স্টিমার দুর্ঘটনায় মারা যায় গৃহযুদ্ধের ঠিক আগে ) পলি খালা আসলে স্যামের মা, জেইন ক্লিমেন্স বড়বোন পামেলাকেই, টমের বড়বোন "ভাল মেয়ে" মেরির চরিত্রে আরোপ করেছেন টোয়েন

 

বিশেষ প্রিয় বন্ধু উইল বাউয়েন আর জো ব্রিগসের একটা সংমিশ্রন হচ্ছে জো হার্পার এই দুই বন্ধুই স্যামের মতো মিসিসিপি স্টিমারের পাইলট ও পরে ক্যাপ্টেন হয়েছিল আর এদের বন্ধু ছিল শহরের বিশিষ্ট মাতাল আর ভবঘুরে উডসান ব্ল্যাংকেনশিপের ছেলে টম ব্ল্যাংকেনশিপ হচ্ছে আমাদের প্রিয় হাকলবেরি ফিনের আসল প্রেরণা!

"ছেলেটা বড়ই ভাগ্যবান, কখনো স্কুলে যেতে হয় নি তাকে ।" অন্যের ফেলে দেয়া কাপড় চোপড়ের ধ্বংসাবশেষ পরে থাকতো ও শরতে সবার শেষে জুতা পড়া শুরু করতো সে আর বসন্তে সবার আগে জুতা ছেড়ে খালি পায়ে চলতে করত ও যখন ইচ্ছা মাছ ধরতে যেত, পাইপ টানত, যতরাত খুশি জেগে থাকত পিপের ভিতরে ঢুকে ঘুম দিত, রাত কাটাত একটা পরিত্যাক্ত চামড়ার কারখানায় একদল শুয়োরের সাথে মোট কথা যাকে বলে একজন আদর্শ রোমান্টিক চরিত্র! কোনো সন্দেহ নেই সব ছেলেরা হিংসা করত এই অনাথ ঘরছাড়া বালককে

ভাবতে পারেন এই ছেলেটা কী পরিনতি হয়েছিল ? হাকলবেরি ফিন নামে গোটা দুনিয়ার লোকতো তাকে চিনেছেই উপরন্তু সে আইন পড়ে পশ্চিমের একটা শহরে "জাস্টিস অভ দ্য পিস" হয়েছিল হাকলবেরি ফিন আদালতের হাকিম! ভাবতেও কেমন লাগে!!

আর টমের 'লেডিলাভ' বেকি থ্যাচার সে মেয়েটার আসল হচ্ছে লরা হকিন্স! লরা হকিন্সের সাথে পিকনিকে গিয়ে আসলেই একবার সুরঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিল টম স্য়্যার থুক্কু স্যাম ক্লিমেন্স রাস্তার ওপাশেই থাকতো সোনালী চুল মেয়েটা তার মন জয় করার জন্য ছেলেদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত সেকালে একটা রেওয়াজ ছিল ক্লাসরুমে শয়তানী করলে শাস্তি (?) ছেলেদেরকে মেয়েদের দিকটায় বসিয়ে দেয়া তো স্যামের জন্য তা ছিল শাপে বর, কারন লরার পাশে বসতে পারতো সে একদম টিনএজ পর্যন্ত স্যাম-লরার প্রেম ছিল, স্যাম যখন স্টিমারের কাজ শেখার জন্য চলে যায় তার আগে পর্যন্ত শেষ পর্যন্ত তারা অন্য মানুষকে বিয়ে করবে কিন্তু ওদের মধ্যে যোগযোগ থাকবে বহুদিন

তবে বাস্তবে ওরা কোনো মোহরের থলে পায়নি! যদিও গুপ্তধনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কোনো অন্ত ছিল না স্যামের দলবলে হতে পারে বইটা "হ্যাপি এন্ডিং" দেবার জন্যই গুপ্তধনের আমদানী করেছেন টোয়েন, গুপ্তধন পেলে আর এই বই লেখার খুব একটা দরকার পড়তো না টোয়েনের আর জাজ থ্যাচারের চরিত্রটা খুব সম্ভব মার্ক টোয়েনের নিজের বাবা জন মার্শাল ক্লিমেন্স থেকেই নেয়া ! জন ক্লিমেন্সও তো হ্যানিবাল (বইতে সেইন্ট পিটার্সবুর্গ) শহরের হাকিম ছিলেন

 

 
 

                 


 

 

পর্ব-২০

টম সয়্যার বইটা কয়েক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ টোয়েনের কাছে প্রথমটা হচ্ছে "গিল্ডেড এজ" কে বাদ দিলে এটা তার প্রথম পুর্ণদৈর্ঘ উপন্যাস, দ্বিতীয় এটা সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম টাইপরাইটারে উপন্যাসের পান্ডুলিপি! তৃতীয় টম আর হাককে নিয়ে অনেক গুলো লেখা লিখেছেন তিনি এটা তার সুচনা এ বইটা মার্ক টোয়েনের সবচেয়ে বিখ্যাত বই এর আগে তিনি স্রেফ "হিউমারিস্ট" হিসেবে পরিচিত ছিলেন, একজন মজার মানুষ যিনি বেশ কিছু ভ্রমন কাহিনীও লিখেছেন এখন তিনি শক্তিমান ফিকশন লেখক হিসেবেও নিজের অবস্থান মজবুত করলেন

টম সয়্যারের মধ্যেই আমরা মার্ক টোয়েনের একান্ত নিজস্ব ব্র্যান্ডের হিউমারের সাথে পরিচিত হবোএকে বলা যেতে পারে 'পরিমিত ভাঁড়ামি' বা 'রিস্ট্রেইন্ড বার্লেস্ক', সেটা ভ্রমনের স্কেচগুলোতে খানিকটা পাওয়া যায় তবে বইটার শেষ প্রান্তে গিয়ে একটা ইনজুন জোর মৃত্যু বর্ণনায় আমরা যে একটা প্যারাগ্রাফ পাই সেটা কেমন যেন কোনো "কৈশোরিক' উপন্যাসে পাওয়া দুষ্কর এই প্যারাটার অনুবাদ অধিকাংশ বাংলা তর্জমায় হয়নি বলেই আমি জানি একজন অত্যন্ত শক্তিমান লেখকের অন্তর্মুখী দর্শনের একটা ঝলক মাত্র দেখতে পাই আমরা তারপরেই টোয়েন অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছেন প্যারাটা ছিল-

Injun Joe's bowie-knife lay close by, its blade broken in two. The great foundation-beam of the door had been chipped and hacked through, with tedious labor; useless labor, too, it was, for the native rock formed a sill outside it, and upon that stubborn material the knife had wrought no effect; the only damage done was to the knife itself. But if there had been no stony obstruction there the labor would have been useless still, for if the beam had been wholly cut away Injun Joe could not have squeezed his body under the door, and he knew it. So he had only hacked that place in order to be doing something -- in order to pass the weary time -- in order to employ his tortured faculties. Ordinarily one could find half a dozen bits of candle stuck around in the crevices of this vestibule, left there by tourists; but there were none now. The prisoner had searched them out and eaten them. He had also contrived to catch a few bats, and these, also, he had eaten, leaving only their claws. The poor unfortunate had starved to death. In one place, near at hand, a stalagmite had been slowly growing up from the ground for ages, builded by the water-drip from a stalactite overhead. The captive had broken off the stalagmite, and upon the stump had placed a stone, wherein he had scooped a shallow hollow to catch the precious drop that fell once in every three minutes with the dreary regularity of a clock-tick -- a dessertspoonful once in four and twenty hours. That drop was falling when the Pyramids were new; when Troy fell; when the foundations of Rome were laid when Christ was crucified; when the Conqueror created the British empire; when Columbus sailed; when the massacre at Lexington was "news." It is falling now; it will still be falling when all these things shall have sunk down the afternoon of history, and the twilight of tradition, and been swallowed up in the thick night of oblivion. Has everything a purpose and a mission? Did this drop fall patiently during five thousand years to be ready for this flitting human insect's need? and has it another important object to accomplish ten thousand years to come? No matter. It is many and many a year since the hapless half-breed scooped out the stone to catch the priceless drops, but to this day the tourist stares longest at that pathetic stone and that slow-dropping water when he comes to see the wonders of McDougal's cave. Injun Joe's cup stands first in the list of the cavern's marvels; even "Aladdin's Palace" cannot rival it.

তবে টম স্য়্যার লিখতে গিয়ে নতুন বাধা এলো খবর পেলেন অনুমতি না নিয়েই "দ্যা গিল্ডেড এজ" কে নাট্যরুপ দিয়ে ফেলেছে সান ফ্রানসিস্কোর একটা থিয়েটার সেখানে কর্নেল সেলার্স এর চরিত্রে অভিনয় করছেন জন টি. রেমন্ড মার্ক টোয়েন সান ফ্রানসিস্কোতে গিয়ে সেটা ঠেকালেন তারপর আবার নাটকটা নিজের মত করে লিখে নিজেই পয়সা দিয়ে আবার নামেল অভিনেতা সেই রেমন্ডই দারুণ চলেছিল নাটকটা, এমন কী পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় ধরে চলবে নাটকটা

তবে তিনি যা বিক্রি টম সয়্যার আশা করেছিলেন সেটা পূরণ হয় নি টম সয়্যার বিক্রি হয়েছিল মাত্র ত্রিশ হাজার কপি, ঠিক যে সময়ে ইনোসেন্ট এব্রডের কাটতি সত্তর হাজার এবং টম সয়্যারের অল্প বিক্রিতেই হতাশ হয়ে প্রকাশনা জগতে পা রাখেন মার্ক টোয়েন (না রাখলেই ভাল করতেন, তবে সে অন্য গল্প) তবে মার্ক টোয়েনের জীবদ্দশাতেই দ্যা এডভেঞ্চার্স অভ টম স্য়্যার একটা ক্লাসিক কিশোর উপন্যাসের মর্যাদা পাবে সর্বকালের সেরাদের প্রথম সারিতে স্থান পাবার দাবীদার একটা বই

টোয়েনের দুই শিশু কন্যা সুজি আর ক্লারাকেই বলা যায় পৃথিবীর প্রথম দুই শিশু যারা মায়ের কোলে বসে টম সয়্যারের অভিযান শুনেছে অলিভিয়া ক্লিমেন্সের সম্পাদনার কিছুটা ছাপ আছে বইটার মধ্যে

 পর্ব (১-১০)

 পর্ব (২১-৩০)

পর্ব (৩১-৪২ শেষ)